রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘আত্তাহিয়াতু’র উচ্চারণ গুরুত্ব ও ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আত্তাহিয়াতু’র উচ্চারণ গুরুত্ব ও ফজিলত

নামাজ ফরজ ইবাদত ও ইসলামের অন্যতম রোকন। এই ইবাদতে কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো যথাযথভাবে আদায় করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। তিন অথবা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ওয়াজিব। (বুখারি: ১/১১৪, হাদিস: ৮২৮) প্রথম ও শেষ উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া ওয়াজিব। (বুখারি ১/১১৫: ৮৩০, ৮৩১, মুসলিম: ১/১৯৪, ১৭৩, হাদিস : ৪৯৮, ৪০২, ৪০৩, তিরমিজি: ১/৮৯, হাদিস: ৩৯১)

উচ্চারণ ও অর্থসহ আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ


বিজ্ঞাপন


উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াততায়্যিবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লা-হি ওয়াবারাকা-তুহু আসসালা-মু আলাইনা ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন। আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু।

অর্থ: যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধিসমূহ নাজিল হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের ওপর ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসুল। (বুখারি: ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম: ৪০২, আবু দাউদ: ৯৬৮, নাসায়ি: ১২৯৮, ইবনে মাজাহ: ৮৯৯, আহমদ: ৪১০১, মেশকাত: ৯০৯)

আত্তাহিয়াতু সম্পর্কিত হাদিস
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করতাম তখন এ দোয়া পাঠ করতাম, “আসসালা-মু আলাল্ল-হি ক্বাবলা ইবাদিহী, আসসালা-মু আলা-জিবরীলা, আসসালা-মু আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু আলা- ফুলা-নিন” (অর্থাৎ আল্লাহর ওপর সালাম তাঁর বান্দাদের আগে, জিব্রাইলের ওপর সালাম, মিকায়িল-এর ওপর সালাম। সালাম অমুকের ওপর)। রাসুলুল্লাহ (স.) যখন সালাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, “আল্লাহর ওপর সালাম” বলো না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।

অতএব তোমরা সালাতে বসলে বলবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু.....ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন” (অর্থ: যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধিসমূহ নাজিল হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের ওপর ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের ওপর।) নবী (স.) বললেন, কোনো ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌছবে। এরপর নবী (স.) বললেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু”- (অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসুল)। নবী (স.) বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দোয়া ভালো লাগে সে দোয়া পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। (বুখারি: ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম: ৪০২, আবু দাউদ: ৯৬৮, নাসায়ি: ১২৯৮, ইবনু মাজাহ: ৮৯৯, আহমদ ৪১০১, মেশকাত ৯০৯। হাদিসের মান সহিহ)


বিজ্ঞাপন


আত্তাহিয়াতুর ইতিহাস নিয়ে প্রচলিত কাহিনি
মেরাজের রাতে আত্তাহিয়াতু লাভ হওয়ার একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। এই গল্পটির সারসংক্ষেপ হলো— রাসুলুল্লাহ (স.) মেরাজের রাতে যখন মহান আল্লাহর সর্বোচ্চ নৈকট্যে পৌঁছলেন, তখন তিনি মহান আল্লাহকে সম্বোধন করে বলেন- التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَات আল্লাহ তাআলা এর জবাবে বলেন- السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ তখন রাসুলুল্লাহ (স) চাইলেন যে, তাঁর উম্মতের জন্যেও সালামের অংশ থাকুক; এজন্য তিনি বলেন- السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ তখন জিবরাঈল (আ)-সহ সকল আকাশবাসী (ফেরেশতারা) বললেন- أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ 

এই গল্পের ভিত্তি আছে বলে জানা যায়নি। কোনো হাদিসগ্রন্থে সনদসহ এ ধরনের কোনো বর্ণনা আসেনি। সনদবিহীনভাবে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। সহিহ বুখারি ও মুসলিমসহ অন্যান্য সকল হাদিসগ্রন্থে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ কথা কোথাও বলা হয়নি যে, এটি মেরাজ থেকে এসেছে।

আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ পড়ার নিয়ম
নামাজি ব্যক্তি নামাজের মধ্যে যখন মৌখিকভাবে তাওহিদের সাক্ষ্য দেয়, তখন তার আঙুলও এই সাক্ষ্য দেবে। এজন্য আত্তাহিয়াতু পড়তে পড়তে যখন ‘আশহাদু আল্লা... ইলাহা’ পর্যন্ত পৌঁছবে, তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা গোল ভিত্ত বানাবে এবং শাহাদত আঙুল দ্বারা ইশারা করবে। আর কনিষ্ঠা ও অনামিকা হাতের তালুর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। 'ইল্লাল্লাহ' বলার পর শাহাদত আঙুল নিচু করবে। তবে অন্য আঙুলগুলো আপন অবস্থায় নামাজের শেষ পর্যন্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, বৃদ্ধাঙ্গুলির নিকটতম আঙুলকে শাহাদত আঙুল বলা হয়। ইশারা শেষ করে আঙুল আর নাড়াচড়া করবে না। (তথ্যসূত্র: সহিহ মুসলিম: ১৩৩৬-১৩৩৭ সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫/২৭০, সুনানে নাসায়ী কুবরা: ১১৯৩, আবু দাউদ: ৯৮৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজসহ দীনের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহিহ জ্ঞান ও বুঝ দান করুন। সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর