সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রোজার বিশুদ্ধ নিয়ত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২২, ১১:০৯ এএম

শেয়ার করুন:

রোজার বিশুদ্ধ নিয়ত

ফরজ রোজা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হলো নিয়ত করা। আর নিয়ত শব্দের অর্থ হলো, মনের ইচ্ছা, সঙ্কল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরের কাজ, জিহ্বার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজা আদায় হয়ে যাবে। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ: ১/১৭৬; রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫)

রমজান মাসে সেহরি খাওয়াকেও অনেকে রোজার নিয়ত বলে গণ্য করেছেন। তবে সেহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৮১)

রাসুলুল্লাহ (স.), সাহাবায়ে কেরাম এবং চার মাজহাবের ইমামগণ কেউই মুখে নিয়ত পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিয়ত মুখে পড়ার প্রচলন ‘কায়েদা বাগদাদী’র লেখক নিজ থেকে শুরু করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীকালে অন্যান্য লেখকরাও যাচাই-বাছাই ছাড়া এটি নকল করেন। তাই প্রচলিত ‘নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি..’ বলে নিয়ত করলে সুন্নতের হক আদায় হয় না বলে মনে করেন বিজ্ঞ আলেমরা।

নিয়ত কখন করতে হবে

ফরজ রোজার নিয়ত রাতে করাই উত্তম। কারণ, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না। ( আবু দাউদ: ১/৩৩৩; আলবাহরুর রায়েক: ২/২৫৯-২৬০; বাদায়েউস সানায়ে: ২/২২৯)

তবে, মাসআলা হচ্ছে, রাতে নিয়ত করতে না পারলে, দিনে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার দেড় ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করা যাবে। শর্ত হলো, সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়তের পূর্ব পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ না করতে হবে। (ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫, রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৪১)

সংশ্লিষ্ট ২টি দলিল

সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন, (আশুরার রোজা যখন ফরজ ছিল তখন) রাসুলুল্লাহ (স.) আসলাম গোত্রের একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করতে বললেন, ‘যে সকাল থেকে কিছু খায়নি, সে বাকি দিন রোজা রাখবে। আর যে খেয়েছে সেও বাকি দিন রোজা রাখবে। কারণ আজ আশুরা-দিবস।’(সহিহ বুখারি: ২০০৭)

আবদুল করিম জাযারি (রহ) বলেন, কিছু লোক সকালে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলো। তখন উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি (ইতোমধ্যে কিছু) খেয়েছে, সে বাকি দিন খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে খায়নি, সে বাকি দিন রোজা রাখবে।’(মুহাল্লা: ৪/২৯৩; বাদায়েউস সানায়ে: ২/২২৯; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৬)

নিয়তের সময় কখন শুরু হয়

নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন-মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিসে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। (আলমুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৪৩; রদ্দুল মুখতার: ২/৩৭৭)

পুরো রমজানের জন্য একসঙ্গে নিয়ত করা যাবে না

পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। কেননা “সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহিহ বুখারি: ১/২; আলমুহাল্লা: ৪/২৮৫; মাবসূত, সারাখসী: ৩/৬০; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫)

রোজার প্রচলিত নিয়তটি হলো—

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছূমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী’।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার নিয়তের ব্যাপারে সংশয় দূর করুন এবং বিশুদ্ধ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর