দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন আল্লাহ তাআলা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’। (সূরা মুমিন: ৬০)
‘আল্লাহ তোমার দোয়ার জবাব দেবেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আল্লাহকে ডাকো। জেনে রাখো, গাফেল (অমনোযোগী ও অসাড়) অন্তরের দোয়ার জবাব দেওয়া হয় না।’ (তিরমিজি: ৭৪৭৯)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা নিজের প্রতিপালককে ডাকো, কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না’। (সূরা আরাফ: ৫৫)
দোয়া কবুল না হওয়ার কারণসমূহ
১) তাড়াহুড়ো করা: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি: ৬৩৪০; মুসলিম: ৭১১০)
২) হারাম থেকে বেঁচে না থাকা: রাসুলুল্লাহ (স.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও পুরো শরীর ধুলোমলিন। সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি: ৮৯৬৯)
৩) আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া: হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগির তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। (তিরমিজি: ২১৬৯)
বিজ্ঞাপন
৪) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা: ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন, (২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং (৩) অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন। সাহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আত-তারগীব: ১৬৩৩)
৫) দোয়ায় পূর্ণ মনোযোগ না থাকা: আল্লাহ অবচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। (তিরমিজি: ৩৪৭৯)
উল্লেখ্য: দোয়া কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূল (স.)-এর ওপর দরুদ পড়ে দোয়া করা উচিত। দোয়ার আগে-পরে দরুদ পড়লে দোয়া কবুল হয়। এ বিষয়ে আবু সুলায়মান আদ-দারানি সুন্দর একটি কথা বলেছেন যে—
“নবীর প্রতি দরুদ এমনিতেই কবুল হয়। আর আল্লাহ কোনো দোয়ার শুরু এবং শেষ অংশ কবুল করবেন, মাঝখানের অংশ প্রত্যাখ্যান করবেন, এমনটি হতে পারে না”
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে যথাযথ নিয়মে একনিষ্ঠভাবে তাঁর কাছে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।