সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনার মেধা ও প্রতিভা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ০৩:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনার মেধা ও প্রতিভা

বিখ্যাত দার্শনিক, চিকিৎসাবিজ্ঞানের পথিকৃৎ ইবনে সিনার পুরো নাম আবদুল্লাহ আল হোসাইন বিন আবদুল্লাহ বিন আবু আলী আল হোসাইন ইবনে সিনা আল বালখি আল বুখারি (৯৮০-১০৩৭)। প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত (বর্তমান উজবেকিস্তান) বুখারার নিকটবর্তী খার্মাতায়েন জেলার আফসানা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আবু আলী ইবনে সিনা নামে তিনি সবার কাছে পরিচিত। ইউরোপে তাঁর পরিচয় ‘আভি সিনা’।

ছোটবেলা থেকেই ইবনে সিনার অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি কোরআন মুখস্থ ও আরবি ভাষা-সাহিত্য আত্মস্থ করেন। এরপর কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি দীনের মৌলিক জ্ঞান, কোরআনের ব্যাখ্যা, আকাইদ শিক্ষা, ইসলাম ধর্মতত্ত্ব, ফিকহ দর্শন, যুক্তিবিদ্যার পাশাপাশি জাগতিক বিদ্যা তথা তর্কশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, হিসাববিজ্ঞান, প্রকৃতি বিজ্ঞান, প্রকৌশলবিদ্যা ও বীজগণিতসহ বহু শাস্ত্রের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করেন। 


বিজ্ঞাপন


এরপর চিকিৎসাবিদ্যা অর্জনের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন। নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ শাস্ত্রে রচিত সব বই-পুস্তকের ওপর গবেষণা শুরু করেন। স্বল্প সময়ে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিসেবে সবার কাছে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ফলে এ শাস্ত্রের বড় বড় জ্ঞানী-গুণী ও বিদগ্ধজনেরা তাঁর কাছে চিকিৎসাশাস্ত্রের মৌলিক ও শাখাগত বিভিন্ন বিষয়ে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এমনকি তিনি তাঁর ওস্তাদ হাকিম আবু আবদুল্লাহ নাতিলী (রহ.)-কে বহুগুণে ছাড়িয়ে যান। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাগতিক ও ঐশীজ্ঞানে সমানভাবে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। 

চিকিৎসাবিদ্যা চর্চা শুরু করেন ১৩ বছর বয়সে এবং ১৮ বছর বয়সে একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরূপ অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার জন্য তিনি ইতিহাসে ‘বিস্ময়কর বালক’ (প্রডিজি বয়) বলে খ্যাত। একদিকে ‘পলিম্যাথ’ অন্যদিকে ‘প্রডিজি বয়’—একই ব্যক্তির পক্ষে এই দুই উপাধিপ্রাপ্তি ইতিহাসে বিরল।

সর্ববিদ্যায় পারদর্শী ইবনে সিনা (রহ.) তাঁর জ্ঞানার্জনকালে কখনো একটি রাতও পরিপূর্ণ ঘুমাননি এবং দিনের বেলায় নিজের অধ্যয়ন ছাড়া অন্য কোনো কাজে নিমগ্ন হননি। শিক্ষাকালীন ও পরবর্তী জীবনে যখনই কোনো বিষয়ে কষ্টকর বা অস্পষ্টতা অনুভব করতেন, তিনি অজু করে মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে বিষয়টির জটিলতা নিরসনের জন্য দোয়া করতেন। তাঁর একনিষ্ঠ দোয়ার বদৌলতে আল্লাহ তাআলা তাঁকে সে সময়ের পাণ্ডিত্য, মেধা ও সৃষ্টিশীল রচনায় এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব দান করেন। বহুশাস্ত্রের পূর্ণাঙ্গ পণ্ডিত ও আলেমে দীন ইবনে সিনা ৪২৮ হিজরি মোতাবেক ১০৩৭ সালে ৫৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। 

ইবনে সিনা গবেষণা ও বই লেখা শুরু করেন ২০-২১ বছর বয়সে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৩৬ বছর সময়ের মধ্যে তিনি  ৪৫০টি গবেষণামূলক পুস্তক রচনা করেন। ইবনে সিনার মাতৃভাষা ফারসি হলেও তিনি কবিতা ছাড়া প্রায় সব বই লিখেছেন আরবি ভাষায়। তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ চিকিৎসাবিজ্ঞানের বই ‘কানুন ফিল তিব্ব’ আরবি ভাষায় লিখিত। এ ছাড়া তাঁর আরো বহু বিখ্যাত প্রকাশনা আছে।


বিজ্ঞাপন


ইরানের হামাদান শহরে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরে ৫৭ বছর খুব একটা দীর্ঘ সময় না হলেও ইবনে সিনা জ্ঞানরাজ্যে, বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যে অবদান রেখে গেছেন তা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইবনে সিনার জীবন ও কর্ম আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিপূরক, সাংঘর্ষিক নয়। তাই ইবনে সিনা ও তাঁর কর্ম কালোত্তীর্ণ। (ওফায়াতুল আয়ান: ২/১৫৭; Edward, Grant, ed. (1974), Harvard University Press. Encyclopedia Britannica. Arabic Language Chapter)

আল্লাহ তাআলা চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা (রহ.)-কে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর