কাউকে কাফের আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারে ইসলামে সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এই বিধানের বাইরে গিয়ে বর্তমানে একশ্রেণির ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে অন্য মুসলিমকে কাফের আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারে খুব উৎসাহী দেখা যায়। এটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতিবিরোধী এবং ভ্রান্ত আকিদা। তাই তাকফিরের ব্যাপারে বা কাউকে কাফের বলার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
অকাট্য প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত কোনো মুসলিমকে কাফের বললে সে নিজেই কাফের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি (অন্যায়ভাবে) তার মুসলমান ভাইকে ‘কাফের’ বলে, নিঃসন্দেহে তাদের যেকোনো একজনের প্রতি কুফরি আপতিত হবে। তার কথায় বাস্তবতা না থাকলে কুফরি তার নিজের দিকেই বর্তাবে।’ (বুখারি: ২/৯০১, মুসলিম: ১১১)
বিজ্ঞাপন
নিজের দিকে কুফুরি বর্তাবে মানে সে নিজেই কাফের হয়ে যাবে। সুতরাং যার মধ্যে পরকালের ভয় আছে সে কখনও কাউকে অন্যায়ভাবে কাফের বলতে পারে না। কাফেরের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা- ‘আর যারা কুফুরি করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।’ (সুরা বাকারা: ৩৯)
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘(মুসলিম) ভাইকে কাফের বলা তাকে হত্যা করার মতো অপরাধ। (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত: ৩৪১০)
তবে হ্যাঁ, কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই কাফের হয়ে যায় এবং প্রমাণিত বিষয়ে কুফরি করে তাতে অটল থাকে, তাকে কাফের ফতোয়া দেওয়ার মাধ্যমে তার অবস্থানকে মুসলমানদের সামনে পরিষ্কার করে দেওয়া জরুরি। যেন তার কুফরি মতবাদ বা কুফরি চিন্তা-চেতনার ব্যাপারে সবাই অবগত হতে পারে। যেমন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকারকারী, শিরককারী অথবা দীনের কোনো অকাট্য ব্যাপার নিয়ে কটূক্তিকারী; যাদের কুফরির ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত একমত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা: ৭২)
‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (কথাকে) অমান্য করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন। সে তাতে চিরকাল থাকবে এবং অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে।’ (সুরা নিসা: ১৪)
বিজ্ঞাপন
মনে রাখতে হবে, কেউ দীন থেকে বেরিয়ে গেলে তাকে কাফের ঘোষণার ক্ষেত্রে ফতোয়া দেবে স্বীকৃত ইফতা বিভাগ এবং এতে থাকবে না কোনো ব্যক্তিবিদ্বেষ। বরং তার জন্য হেদায়েতের দোয়া করা, ঈমানের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব।
সুতরাং অনর্থক কাফের কাফের বলে কাদা ছোড়াছুড়ি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

