হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর নাম প্রত্যেক মুসলমানের কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে তার প্রভাব অপরিসীম। তার জীবনী ও কীর্তিগাথা মুসলমানদের হৃদয়ে চিরদিন জীবন্ত হয়ে আছে ও থাকবে। একজন আদর্শ পুরুষ হিসেবে বিশ্ব-জগতে মুসলমানদের কাছে তিনি পরম ভক্তি, শ্রদ্ধার পাত্র। ৪৭০ হিজরিতে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন তিনি এবং প্রসিদ্ধি রয়েছে যে ৫৬১ হিজরিতে রবিউসসানি মাসের ১১ তারিখে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
ইয়াজদাহম শব্দটি ফারসি। যার অর্থ হলো ১১। সেই হিসেবে রবিউস সানির ১১তম দিনে আব্দুল কাজের জিলানী (রহ)-এর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে যে ফাতেহা, দোয়ার আয়োজন ও বিভিন্ন রকম আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়, তা ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম নামে পরিচিত। এ উপলক্ষে বহুকাল আগে থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঐচ্ছিক ছুটির রেওয়াজ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম একটি রসম মাত্র। ইসলামে কারো জন্মদিন বা মৃত্যুদিবস উপলক্ষে ঘটা করে আনুষ্ঠানিকতা পালনের অনুমোদন নেই। মূলত অমুসলিম দেশগুলোতে এর উদ্ভব হয়। বলা হয়ে থাকে- জন্মদিনের সূচনা হয়েছে ফিরাউন থেকে। বাইবেলের বুক অব জেনেসিসে এসেছে, ‘তৃতীয় দিনটা ছিল ফিরাউনের জন্মদিন। ফিরাউন তার সব দাসদের জন্য ভোজের আয়োজন করলেন। সেই সময় ফিরাউন রুটিওয়ালা ও খাদ্যদ্রব্য পরিবেশককে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন।’ (আদি পুস্তক: ৪০২)
নবী-রাসুল, খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য আদর্শ। তাঁদের কারোরই জন্ম-মৃত্যু উপলক্ষে অমুসলিম-প্রথা গ্রহণের অনুমতি শরিয়ত দেয়নি। অথচ নবী-রাসুল ও সাহাবায়ে কেরাম সকল অলি-বুজুর্গেরও আদর্শ। আর এজন্যই বুজুর্গানে দীন নিজেদের জন্মদিবস পালন করেননি। অনুসারীদেরকেও আদেশ করেননি। শায়খ আব্দুল কাদের জিলানীও (রহ) অনুসারীদেরকে তাঁর ওফাতদিবস পালন করতে বলে গেছেন বলে দলিল-প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু পরবর্তী যুগের লোকেরা তা উদ্ভাবন করেছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনও কিছু মুসলিম গোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরনের আয়োজন দেখা যায়।
ঈমানদার হিসেবে আব্দুল কাদের জিলানী (রহ)-এর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সুধারণা পোষণ করা, তাঁর জন্য নেক দোয়া করা, কবর জিয়ারত করা উচিত হবে। কিন্তু শরিয়ত যা করতে অনুমতি দেয়নি তা ঘটা করে পালন করা অজ্ঞতারই পরিচয় বহন করে। তাছাড়া বছরের যেকোনো দিন নেককার বুজুর্গদের জীবনী আলোচনা করা যায় এবং তাঁদের জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। তা না করে নির্দিষ্ট একটি দিনে জায়েজ-নাজায়েজ বিভিন্ন রকমের কাজকর্মের মাধ্যমে দিবস উদযাপন করা হয়, তাকে কেবল রসম ও বিদআতই বলা যায়।
এই ধরনের বিদআত ও রসম পালনের মাধ্যমে মূলত বুজুর্গ অলিদের অবমাননাই করা হয়। এই অবমাননার জন্য শাস্তি পেতে হবে। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে দুশমনি করবে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।’ (সহিহ বুখারি: ৬৫০২)
বিজ্ঞাপন
ইমাম তাহাবি (রহ.) বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা হলো, পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরাম, তাবেয়িন এবং তাঁদের পরে আগত মুহাদ্দিসিনে কেরামের যথাযথ মর্যাদা বজায় রাখা। যে তাঁদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবে এবং সমালোচনা করবে সে ভ্রষ্টতার মধ্যে রয়েছে। (আকিদাতুত তাহাবি: ৩০)
সুতরাং মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি ও আলেম-ওলামাদের কোনোভাবেই অবমাননা করা যাবে না। তাছাড়া শরিয়তের অনুমোদন নেই এমন কাজের কঠোর শাস্তির হঁশিয়ারি রয়েছে কোরআন-হাদিসে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘..প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)
বিদআতে জড়িত ব্যক্তিরা কেয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবেন। সেদিন রাসুল (স.) তাদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। তিনি তাদের বলবেন, ‘যারা আমার দীনের পরিবর্তন করেছ, তারা দূর হও, দূর হও।’ (বুখারি: ৬৬৪৩) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের অনুমোদন নেই এমন রসম রেওয়াজ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

