সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জুমার দিন সুরা কাহাফ ও দরুদপাঠের ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২২, ১১:০১ এএম

শেয়ার করুন:

জুমার দিন সুরা কাহাফ ও দরুদপাঠের ফজিলত

জুমাবার মুমিনের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে হাদিসে। সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এদিনের কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিপুল সওয়াব দান করেন। এর মধ্যে সুরা কাহাফ ও দরুদ পাঠ বিশেষ দুটি আমল। 

দরুদ পাঠ 
জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ এক আমল হচ্ছে নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। রাসুল (স.) বলেন, ‘দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সব সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ: ১০৪৭)


বিজ্ঞাপন


হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আমি তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য ১০ বার ইস্তেগফার করে।’ (তারগিব: ৩/২৯৯)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘..যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার নিকটতম হবে।’ (তারগিব: ১৫৭)

আলী (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নবী করিম (স.)-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নুরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল: ১৭৪)

সুরা কাহাফ পাঠ 
জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়ার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, তার (ঈমানের) নুর এই জুমা হতে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মেশকাত: ২১৭৫)


বিজ্ঞাপন


ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নুর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কেয়ামতের দিনটি তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৬, পৃ-৩৯৮)

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফেতনা হলো দাজ্জালের ফেতনা। এই ফেতনা থেকে বেঁচে থাকা অতটা সহজ নয়। এমন কঠিন ফেতনা থেকেও নিরাপদ থাকার উপায় হচ্ছে সুরা কাহাফ পাঠ। জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠের কথা হাদিসে বিশেষভাবে বর্ণিত হলেও অন্য যেকোনো দিন সুরা কাহাফ পাঠ করা ও মুখস্থ করার ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যেভাবে নাজিল করা হয়েছে, সেভাবে যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য সেটি নিজের স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলো হবে এবং শেষ ১০ আয়াত পড়লে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে আর দাজ্জাল তার ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। (সুনানে নাসায়ি: ১০৭২২)

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯; আবু দাউদ: ৪৩২৩)

আরেক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৪৬/৬)

উল্লেখ্য, জুমার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি পরিমাণে দোয়া করা। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে, আল্লাহ তা কবুল করেন। (আবু দাউদ: ১০৪৮)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসুল (স.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বুখারি: ৬৪০০)

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, শুক্রবারে আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ জাদুল মাআদ-এ বর্ণিত আছে, জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। (জাদুল মাআদ: ২/৩৯৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমার দিনের যাবতীয় কল্যাণ নসিব  করুন। আমিন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর