সকল সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর দয়া অফুরন্ত। এর মধ্যে মানুষের প্রতি তিনি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে। আবার মানুষের মধ্যে কাউকে করেছেন ঈমানের নূরে আলোকিত। সেই ঈমানদারদের মধ্যে আবার কিছু বান্দাকে তিনি অনেক ভালোবাসেন।
তাঁরা কারা? হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, অবশ্যই দুটি গুণে গুণান্বিত থাকবেন তাঁরা। গুণ দুটি হলো— ১) তাঁরা সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন। ২) দুনিয়ার প্রতি তাঁদের আসক্তি থাকবে না; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরা সবকিছুই করবেন।
বিজ্ঞাপন
১) সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট
ইবরাহিম (আ.)-এর অনেক পরীক্ষা নিয়েছেন মহান আল্লাহ। আসলে তিনি তাঁর ভালোবাসার বান্দাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। তাই বহু ঈমানদারের জীবনে দেখবেন দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ লেগেই থাকে। কোরআনের কোথাও বলা হয়নি যে, আল্লাহ তাআলা ফেরাউন কিংবা নমরুদের পরীক্ষা নিয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে রাসুল (স.) বলেন, মুমিনের জন্য দুনিয়া কারাগারসদৃশ ও কাফেরের জন্য জান্নাতসদৃশ। (মুসলিম: ২৯৫৬)
আল্লাহর রাসুল (স.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর কোনো বান্দার মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন, তখন দুনিয়ায় তাকে তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করেন। আর যখন তিনি কোনো বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে কেয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসেন তখন তাদের তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তাঁর জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি থাকে, আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি থাকে।’ (তিরমিজি: ২৩৯৬; সহিহাহ: ১২২০; মেশকাত: ১৫৬৫)
তখন সেই বান্দারাও এই পরীক্ষা ও মসিবতকে কল্যাণকর মনে করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তারা সে সব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৭)
ধৈর্যকে সর্বোত্তম নেয়ামত আখ্যা দিয়ে নবীজি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোনো নেয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (বুখারি: ১৪৬৯)
আবু উমামা থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে বনি আদম, যদি তুমি ধৈর্যধারণ করো ও প্রথম দুঃখের সময় অধৈর্য না হয়ে তাতে সাওয়াবের আশা করো, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া কোনো প্রতিদানে সন্তুষ্ট হবো না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৯৭)
বিজ্ঞাপন
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তার শরীর, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্যধারণ করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। (আবু দাউদ: ৩০৯০)
২) দুনিয়ার আসক্তি থাকবে না
আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তার মধ্যে পদ-পদবী, অর্থ-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি—এসব দুনিয়াবি কোনোকিছুতে তাঁর আকর্ষণ থাকবে না। আল্লাহ তাআলা কিছু বান্দাকে ভালোবেসে এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। চাইলেও তাঁকে এসবকিছু দেওয়া হয় না। মূলত আল্লাহ তাআলা সেই বান্দাকে পরিকল্পিতভাবে দুনিয়াবি ফায়দা থেকে সরিয়ে রাখেন। সুবহানাল্লাহ। এবিষয়ে অনেক হাদিস পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে—
কাতাদা ইবনে নুমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তাকে দুনিয়া (প্রাচুর্য) থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন তোমাদের কেউ তার রোগীকে (পানি স্পর্শ করলে যার অসুবিধা হবে,তাকে) পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখে।’(তিরমিজি: ২০৩৬)
তবে, এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ কাউকে দুনিয়া দিলে তিনি আল্লাহর ঘৃণিত ব্যক্তি হয়ে যাবেন। প্রিয় বান্দাদের অনেককে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার প্রাচুর্যও দিয়েছেন। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে ওসমান (রা.), সোলায়মান (আ.), দাউদ (আ.)সহ অনেকেই রয়েছেন। তবে তাঁদের কারো মধ্যেই দুনিয়াপ্রীতি ছিল না। এসব বান্দাদেরকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া দিয়েছেন, আবার ভালোবাসেনও।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার মতো আমল করার তাওফিক দান করুন। উপরোক্ত গুণ দুটি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

