শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মুসল্লিদের টপকে সামনে আগানো জুমার আদবের পরিপন্থী

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২২, ১২:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মুসল্লিদের টপকে সামনে আগানো জুমার আদবের পরিপন্থী

জুমাবার মুসলমানদের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে হাদিসে। জুমাকেন্দ্রিক প্রত্যেক আমল মুমিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুমার দিনের কিছু আদব বা শিষ্টাচারের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে হাদিসে। মসজিদে বসার ক্ষেত্রে মুসল্লিদের টপকে সামনে না আগানো জুমার দিনের বিশেষ আদব।

অনেককেই দেখা যায় জুমার দিন মসজিদে দেরিতে আসলেও মুসল্লিদের ফাঁক করে সামনের কাতারে চলে যেতে। এটি জুমার শিষ্টাচার পরিপন্থী কাজ। বরং ‌মসজিদে গিয়ে যেখানে জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই বসে পড়া উচিত। কেননা মুসল্লিদের টপকে সামনে আগালে মানুষের শারীরিক কষ্ট ও মানসিক দুঃখ অনুভব হয় এবং তাদের নীরবতা, একাগ্রতা ও মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে। আর কোনো মুসল্লিকে এমনকি কোনো মানুষকেই ইচ্ছাকৃত কষ্ট দেওয়া ইসলামে জায়েজ নেই। তাই কারো মাথা ও কাঁধের উপর দিয়ে লাফিয়ে সামনে যেতে চেষ্টা করাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। 


বিজ্ঞাপন


সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮৩)

তবে, সামনের কাতারে বসার সওয়াব অপেক্ষাকৃত বেশি। সেজন্য মসজিদে তাড়াতাড়ি আসতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। জুমার দিন মসজিদে আগেভাগে আসার এবং ইমামের কাছাকাছি বসার অনেক ফজিলত রয়েছে। নবী (স.) বলেছেন, ‘যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ  দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বুখারি: ৮৮২)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যদি লোকেরা জানত যে আজান ও প্রথম কাতারে সালাত আদায়ে কী নেকি আছে, তাহলে তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করত। অনুরূপভাবে যদি তারা জানত এশা ও ফজরের সালাতে কী নেকি রয়েছে, তবে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও ওই দুই সালাতে আসত।’ (বুখারি: ৬১৫)

সুতরাং জুমার দিন মসজিদে আগেভাগে এসে প্রথমদিকের কাতারে বসার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু পরে এসে মুসল্লিদের টপকে সামনে আগানো কোনোভাবেই কাম্য নয়। 


বিজ্ঞাপন


উল্লেখ্য, জুমার দিনের আরেকটি বিশেষ আদব নিয়ে অনেকের মধ্যে গাফিলতি দেখা যায়। সেই আদবটি হচ্ছে চুপচাপ থাকা এবং খুতবা শোনা। কোনো অবস্থাতেই জুমার দিন মসজিদে গিয়ে কথা বলা উচিত নয়। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত , প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘জুমার দিন ইমাম খুতবা দেওয়া অবস্থায় যদি তোমার পাশের মুসল্লিকে ‘চুপ থাকো’ বলো, তাহলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।’ (বুখারি: ৯৩৪, মুসলিম: ৮৫১)

আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ: ৩৪৫)

উল্লেখিত দুটি হাদিসেই অনর্থক কথা ও কাজকে জুমার দিনের ফজিলতলাভে বাধা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই আমাদের উচিত চুপচাপ থাকা এবং মনোযোগসহ ইমামের খুতবা শোনা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের আদবের প্রতি সচেতন হওয়ার এবং জুমার দিনের পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জনে সুন্নাহ সমর্থিত আমলগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর