বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শিরকমুক্ত জীবনের গুরুত্ব ও পুরস্কার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

শিরকমুক্ত জীবনের গুরুত্ব ও পুরস্কার

ইসলামে শিরক মহাপাপ ও গুরুতর অপরাধ। এর পরিণাম ভয়াবহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেবেন। তার স্থান হবে জাহান্নামে। আর সীমালংঘনকারীদের জন্য আখেরাতে কোনো সাহায্যকারী থাকবে না (সুরা মায়েদা: ৭২)

শিরক অর্থ- অংশীদার করা, সহযোগী বানানো, সমকক্ষ করা ও সম্পৃক্ত করা। কার্যত এমন সব বিশ্বাস, কাজ, কথা ও অভ্যাসকে শিরক বলা হয়, যার দ্বারা মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাত (রব), উলুহিয়্যাত (ইলাহ), নাম ও গুণাবলীতে অপর কারো অংশীদারিত্ব বা সমকক্ষতা প্রতীয়মান হয়। আকিদার পরিভাষায়, শিরক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় অন্য কারো জন্য করা। তাওহিদের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকটি হচ্ছে শিরক। সবচেয়ে বড় অত্যাচারের নাম শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক অতি বড় জুলুম।’ (সুরা লোকমান: ১৩)


বিজ্ঞাপন


শিরকমুক্ত জীবনের গুরুত্ব
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর এ ছাড়া অন্যসব গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা: ৪৭)। তওবা করলেও শিরকের গুনাহ ক্ষমার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই শিরক থেকে বেঁচে থাকা বান্দার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়।  হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৪০৩৫)

উল্লেখিত হাদিসে আল্লাহ এমন ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে না এবং আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি নিখাদ বিশ্বাস লালন করে। সুতরাং মুমিনের জন্য ঈমান-ইবাদতসহ জীবনের সর্বত্র শিরক পরিহার করা আবশ্যক। স্মরণ রাখতে হবে, অনেক শিরক আছে, যা খুবই সূক্ষ্ম। যার কারণে বেশির ভাগ মানুষ ঈমান আনার পরও মুশরিক। পবিত্র কোরআনে বিষয়টি এসেছে এভাবে- ‘আবার অনেক মানুষ আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু তারা শিরক করে। (সুরা ইউসুফ: ১০৫-১০৬)

শিরকমুক্ত জীবনের পুরস্কার
কোরআন ও হাদিসে শিরকমুক্ত ঈমান ও ইবাদত তথা মুমিন জীবনের অসংখ্য পুরস্কার বর্ণিত হয়েছে। যার কয়েকটি হলো—

১) যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষা
আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদের উদ্ধার করেন, তখন তারা শিরকে লিপ্ত হয়।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৫)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, শিরকমুক্ত জীবন বান্দার যাবতীয় ভোগান্তি থেকে মুক্তির হাতিয়ার।


বিজ্ঞাপন


২) জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা
যারা শিরকমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে, আল্লাহ তাদের জান্নাত দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করে যে সে তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করেনি, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৮০)

৩) নিরাপত্তা ও হেদায়াত লাভের উপায়
যারা ঈমান আনার পর শিরকে লিপ্ত হয় না, আল্লাহ তাদের চূড়ান্ত হেদায়াত দান করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাদের ঈমানের সঙ্গে জুলুমের (শিরকের) সংমিশ্রণ ঘটায়নি তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারা সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা আনআম: ৮২)

৪) আল্লাহর ক্ষমা লাভ
যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করবে না, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৪০৩৫)

৫) আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ
যারা ঈমান ও ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না পরকালে আল্লাহ তাদের সাক্ষাৎ দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা করে সে যেন নেক আমল করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। প্রকৃত মুমিন হিসেবে গুনাহমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর