রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মসজিদে বিচার-ফয়সালাসহ যেসব কাজ বৈধ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০২:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

মসজিদে বিচার-ফয়সালাসহ যেসব কাজ বৈধ
প্রতীকী ছবি

মসজিদ আল্লাহর ঘর। মুসলিম সভ্যতার প্রধান নিদর্শন। মুসলমানদের ইবাদতের কেন্দ্র। পবিত্র এই স্থানে মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। রমজান মাসে ইতেকাফ করে থাকেন। নামাজ-ইতেকাফ ছাড়াও কিছু কাজ আছে, যা মসজিদে করা বৈধ। যেমন—

বিচার-ফয়সালা
কোনো বিষয়ে মীমাংসার প্রয়োজন হলে বা সমাধান দিতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মসজিদে বসেই তা করতে পারবেন। (বুখারি: ৬৩)
আয়েশা (রা.) বলেন, সুদ সম্পর্কিত সুরা বাকারার আয়াত অবতীর্ণ হলে নবী করিম (সা.) মসজিদে গিয়ে সেসব আয়াত সাহাবিদের পাঠ করে শোনান। অতঃপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দেন। (বুখারি: ৪৫৯)


বিজ্ঞাপন


ধর্মীয় পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহণ
শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম উপযুক্ত স্থান মসজিদ। মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় বিষয় প্রতিদিন ইমামের কাছ থেকে শিক্ষা নেবেন এবং সে অনুযায়ী আমল করবেন। আবার ইমামও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষা দেবেন। আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, এই মসজিদগুলো বানানো হয়ে থাকে আল্লাহর স্মরণ ও আলোচনা, নামাজ ও কোরআন পাঠের জন্য। (মুসলিম: ২৮৫; মুসনাদে আহমদ: ১২৯৮৪)
সুতরাং উদ্দেশ্যগুলোর অপরিহার্য সহায়ক ও সম্পূরক হিসেবে দীনি ইলম তথা শরয়ি জ্ঞানচর্চাও মসজিদের মৌলিক উদ্দেশ্যগুলোর অন্যতম।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (স.) থেকে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে একমাত্র দীন শিক্ষাগ্রহণ অথবা শিক্ষাদানের জন্য আসবে, তার মর্যাদা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশগ্রহণকারীর মতো হবে। (ইবনে মাজাহ: ২২৭)

বৈধ কথাবার্তা বলা
জাবের বিন সামুরা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) যে স্থানে সালাত আদায় করতেন সূর্য পূর্ণভাবে উদয় না হওয়া পর্যন্ত ওই স্থান থেকে উঠতেন না। সূর্য উদয় হলে উঠে দাঁড়াতেন। আর ইত্যবসরে কথাবার্তা বলতেন এবং জাহেলি যুগের কাজকারবারের আলোচনা করে সাহাবারা হাসতেন এবং রাসুল (স.)ও মুচকি হাসতেন।’ (আবু দাউদ: ১২৯৪)

মসজিদে অবস্থান ও খাওয়াদাওয়া
যেকোনো বৈধ কাজের মতো মসজিদে অবস্থান করা ও খাওয়াদাওয়া করা জায়েজ। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘খন্দকের যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তির নিক্ষিপ্ত তীরে সাদ ইবনে মুআজ (রা.) আঘাতপ্রাপ্ত হলে রাসুল (স.) তার জন্য মসজিদের ভেতর একটি তাঁবু টাঙালেন। যেন তিনি কাছ থেকে তাকে দেখতে পারেন।’ (আবু দাউদ: ৩১০১)

আর যারা ইতেকাফ করবে তারা মসজিদে অবস্থান করবে এবং মসজিদেই খাওয়াদাওয়া করবে। এছাড়া রমজান মাসে মসজিদে ইফতারেরও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। ইফতার ছাড়াও মসজিদে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে। তবে আদব রক্ষা করা অন্যতম শর্ত। তাবুক যুদ্ধের পর তিন ব্যক্তিকে মসজিদে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাঁদের জন্য মসজিদেই পানাহারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাঁদের ঘটনা সুরা তওবার ১১৭ ও ১১৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে মসজিদে রুটি ও গোশত খেতাম।’ (ইবনে মাজাহ: ২৬৬৯)


বিজ্ঞাপন


ঘুমানো
বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানো যায়। আব্বাদ ইবনু তামিম (রা.) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুল (স.)-কে মসজিদের মধ্যে চিৎ হয়ে এক পা অন্য পায়ের ওপর রেখে শায়িত অবস্থায় দেখেছি।’ (বুখারি: ৪৭৫)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুল (স.)-এর জীবদ্দশায় মসজিদে ঘুমাতাম। অথচ আমি তখন যুবক ছিলাম।’ (বুখারি: ৪৪০)
অতএব বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে থাকা ও ঘুমানো যায়। তবে এক্ষেত্রে মসজিদের পবিত্রতার আদবগুলো যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

অভাবী লোকদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারী একে অপরের সহায়ক’ (সূরা তওবা: ৭১)। রাসুল (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি: ১৭৩২)
মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না আল-আনাজি (রহ.) মুনজির ইবনু জারির থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা ভোরের দিকে রাসুল (স.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তাঁর কাছে পাদুকাবিহীন, প্রায় বস্ত্রহীন, গলায় চামড়ার ‘আবা’ (কালো ডোরাকাটা চাদর দিয়ে কোনো রকম শরীর ঢাকা পোশাক) পরিহিত এবং নিজেদের তরবারি ঝুলন্ত অবস্থায় একদল লোক এলো। এদের বেশির ভাগ কিংবা সবাই মুজার গোত্রের লোক ছিল। অভাব-অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রাসুল (স.)-এর মুখমণ্ডল পরিবর্তিত ও বিষণ্ন হয়ে গেল। তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন, অতঃপর বেরিয়ে এলেন। তিনি বেলাল (রা.)-কে আজান দিতে নির্দেশ দিলেন। বেলাল (রা.) আজান ও ইকামত দিলেন। সালাত শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং সুরা নিসার প্রথম আয়াত ও সুরা হাশরের ১৮ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করেন। অতঃপর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেরই তাদের দিনার, দিরহাম, কাপড়চোপড়, গম ও খেজুরের ভাণ্ডার থেকে দান করা উচিত। অবশেষে তিনি বলেন, যদি খেজুরের এক টুকরাও হয়।’ বর্ণনাকারী বলেন, এটা শুনে আনসারদের এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এলো, যা সে বহন করতে পারছিল না। অতঃপর লোকেরা একের পর এক জিনিসপত্র আনতে লাগল। এমনকি আমি দেখলাম, শস্যে ও কাপড়চোপড়ে দুটি স্তূপ হয়ে গেছে এবং দেখলাম, (আনন্দে) রাসুল (স.)-এর চেহারা ঝলমল করছে, যেন তা স্বর্ণে মোড়ানো...।’ (মুসলিম: ২২৪১)

সুতরাং প্রয়োজন হলে কারো জন্য মসজিদেই সাহায্য প্রার্থনা জায়েজ আছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মসজিদের পবিত্রতার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন। বৈধ কাজকে অবৈধ মনে করার গোমরাহি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর