শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আমরা ‘ক্রাশ’ বলছি, রাসুল (স.) বলেছেন জিনা 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০১:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

আমরা ‘ক্রাশ’ বলছি, রাসুল (স.) বলেছেন জিনা 

অভিধানে ‘ক্রাশ’ শব্দের অর্থ ভাঙা বা নিংড়ানো। হৃদয় ভাঙা বা প্রেমে পড়ার সমার্থক হিসেবে আজকাল তরুণ-তরুণীরা ব্যবহার করছে ক্রাশ শব্দটি। এক কথায়- কাউকে দেখে ভালো লেগে যাওয়া, চেহারা বারবার চোখে ভাসা, তার সঙ্গে কথা বলা বা মেলামেশার ইচ্ছাপোষণ করাই হলো ক্রাশ। অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা, যেকোনো সেলিব্রেটি কিংবা সুন্দরীকে মনে মনে কামনা করা, দেখা ও কথা বলার আশায় তার কাছে ছুটে যাওয়া, এমনকি সরাসরি বন্ধুত্বের আবেদন করা সবই ক্রাশ শব্দেরই বর্তমান প্রতিফলন।

অথচ এসব থেকে সাবধান করেছেন মহানবী (স.)। বেগানা নারীকে দেখা, কথা বলা ও পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে জিনা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন তিনি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি (স.) বলেছেন, চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা আর কুপ্রবৃত্তি সৃষ্টি করে কামনা ও লালসা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।’ (বুখারি: ৬২৪৩)


বিজ্ঞাপন


আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘দেখা ও কথা বলাকে জিনা বলার কারণ এই যে দুটোই প্রকৃত জিনার ভূমিকা—জিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক। জিহ্বা হচ্ছে বাণীবাহক। আর যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার—সত্য প্রমাণকারী।’ (মাআলিমুস সুনান: ৩/২২৩)

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) লিখেছেন, ‘..মানুষ যত প্রকার পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই তার মূল কারণ। কেননা দৃষ্টি আকর্ষণ জাগায়। আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা বিভ্রমে নিমজ্জিত করে। চিন্তা থেকে সৃষ্টি হয় লালসা আর উত্তেজনা। এই উত্তেজনা ইচ্ছাশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে। আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প থেকেই ঘটনা সংঘটিত হয়। বাস্তবে যখন কোনো বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোনো উপায় থাকে না।’ (আল-জাওয়াব আলকাফি: ২০৪)

এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি চালনার কুফল সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি ইবলিসের বিষাক্ত বাণ বিশেষ’ (মুসনাদ আশশিহাব, ১ম খণ্ড, পৃ: ১৯৫-১৯৬)। ইবনে কাসির (রহ) এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীর, যা মানুষের হৃদয়ে বিষের উদ্রেক করে।’ (ইবনে কাসির, ৩য় খণ্ড, পৃ-৩৭৬)

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত হলেই লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ সম্ভব। অন্যথায় তাকে চরম নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হতে হয়। তাই বেগানা নারীর দিকে দ্বিতীয়বার চোখ তুলে তাকানো হারাম। এটি এজন্য যে, দ্বিতীয়বারের দৃষ্টির পিছনে মনের কলুষতা, লালসা ও উত্তেজনা থাকাই স্বাভাবিক। তার মানে এই নয় যে, পরস্ত্রীকে বুঝি একবার দেখা জায়েজ। না, আসলে পরস্ত্রীকে দেখা কোনোভাবেই জায়েজ নয়। প্রথমবার অনিচ্ছাকৃত হয়, তাই দ্বিতীয়বারের কথা বলা হয়েছে। এজন্যেই কোরআন ও হাদিসে দৃষ্টি নত করে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো- ‘পরস্ত্রীর প্রতি আকস্মিক দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে আপনার কী আদেশ? তিনি বললেন, ‘তোমার চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও।’ (আবু দাউদ: ২১৪৮, সহিহ আলবানি)


বিজ্ঞাপন


দৃষ্টি ফেরানো কয়েকভাবে হতে পারে। উদ্দেশ্য হচ্ছে পরস্ত্রীকে দেখার পাপ থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা। আকস্মিক অনিচ্ছাসত্ত্বেও যদি কারো প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই চোখ নিচু করা, অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া ঈমানদার ব্যক্তির জন্য জরুরি।

বস্তুত ইসলামি সমাজব্যবস্থার পবিত্রতা রক্ষার্থে শুধুমাত্র বেগানা মহিলা দেখাই হারাম তা নয়, মহিলাদের পক্ষেও বেগানা পুরুষ দেখা হারাম। এর মূল কারণ হচ্ছে যৌন বিপর্যয়ের ভয়। মেয়েদের ব্যাপারে এ ভয় অনেক বেশি। কেননা যৌন উত্তেজনা যেমন মেয়েদের বেশি, সে পরিমাণে বুদ্ধিমত্তা তাদের কম। আর পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কারণেই অধিক যৌন বিপর্যয় ঘটে থাকে।’ (নাইলুল আওত্বর: ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ-১৭৭)

তাই চোখের জিনা থেকে নারী-পুরুষ সবাইকে দূরে থাকতে হবে। তাহলেই চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন সম্ভব। আল্লাহ তাআলা বলেন,  মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।’ (সুরা নুর: ৩০)

এখন ভাবুন, আমাদের সমাজ ও মিডিয়া যেগুলো ক্রাশ হিসেবে আমাদের সামনে তুলে ধরছে সেগুলো আসলে কী? তাই নফসের প্রলোভনে পড়বেন না। সর্বদা ঈমান-আমল নিয়ে বাঁচুন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দৃষ্টি হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর