মহানবী (স.)-এর মূল নাম ‘মুহাম্মদ’। তবে তাঁর আরও অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। নামের প্রকৃত সংখ্যা বিষয়ে একাধিক মতামত থাকায় গুণবাচক নামগুলো সুনির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। সিরাত গবেষকরা মহানবী (স.)-এর নামের সংখ্যা ৯৯ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। (জাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা-২৮)
‘মুহাম্মদ’ নামের সঙ্গে ‘আহমদ’কেও নবীজির মূল নাম হিসেবে অভিহিত করেন অনেকে। কেননা পবিত্র কোরআনে মুহাম্মদ ও আহমদ দুই নামেরই বিশেষ উল্লেখ পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, তিনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবী’ (সুরা আহজাব: ৪০)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘(ঈসা আ. বলেন,) নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি আমার পরবর্তী এমন একজন রাসুলের, যার নাম হবে আহমদ।’ (সুরা সাফ: ৬)
বিজ্ঞাপন
নবীজির উপনাম আবুল কাসিম। বড় ছেলে ‘কাসিম’-এর নামের সঙ্গে যুক্ত করে নবীজি (স.)-এর উপনাম নির্ধারণ করা হয় ‘আবুল কাসিম’ বা কাসিমের পিতা। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার নামে নাম রাখো। কিন্তু আমার উপনামে নামকরণ করো না। নিশ্চয়ই আমি আবুল কাসিম। তোমাদের মাঝে বণ্টন করি।’ (সহিহ মুসলিম: ২১৩৩)
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ২৪টি গুণবাচক নামের উল্লেখ দেখা যায়। নামগুলো হলো—
১. শাহিদ তথা সাক্ষ্যদাতা (সুরা আহজাব: ৪৫)
২. মুবাশশির তথা সুসংবাদদাতা (সুরা আহজাব: ৪৫)
বিজ্ঞাপন
৩. নাজির তথা সতর্ককারী (সুরা আহজাব: ৪৫)
৪. দায়ি ইলাল্লাহ তথা আল্লাহর দিকে আহবানকারী (সুরা আহজাব: ৪৬)
৫. সিরাজুম মুনিরা তথা প্রোজ্জ্বল বাতি (সুরা আহজাব: ৪৬)
৬. মুজাক্কির তথা যিনি আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেন (সুরা গাশিয়া: ২১)
৭. রাসুল তথা প্রেরিত পুরুষ, যিনি শরিয়ত লাভ করেছেন (সুরা আহজাব: ৪৬)
৮. রাউফুর রহিম তথা কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও দয়াশীল (সুরা তাওবা: ১২৮)
৯. রাহমাতুল-লিল-আলামিন তথা যিনি জগদ্বাসীর জন্য আল্লাহর অনুগ্রহস্বরূপ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
১০. মুজ্জাম্মিল তথা চাদরাবৃত (সুরা মুজ্জাম্মিল: ১)
১১. মুদ্দাসসির তথা বস্ত্রাবৃত (সুরা মুদ্দাসসির: ১)
১২. নবী তথা প্রেরিত পুরুষ (সুরা আনফাল: ৬৪)
১৩. রাসুলুল্লাহ তথা আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ (সুরা ফাতহ: ২৯)
১৪. খাতামুন-নাবিয়্যিন তথা শেষ নবী (সুরা আহজাব: ৪০)
১৫. হাদি তথা পথপ্রদর্শক (সুরা আশ-শুরা: ৫২)
১৬. মাসুম তথা যিনি পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত (সুরা মায়িদা: ৬৭)
১৭. আন-নাবিয়্যুল উম্মি তথা নিরক্ষর নবী (সুরা আরাফ: ১৫৮)
১৯. সাহিবু খুলুকুল আজিম তথা উত্তম চরিত্রের অধিকারী (সুরা কালাম: ৪)
২০. নুর তথা জ্যোতি (সুরা মায়িদা: ১৫)
২১. কায়িমুন আলাল-হাক তথা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত (সুরা নামল: ৭৯)
২২. কারিম তথা সম্মানিত (সুরা দুখান: ৪৯)
২৩. মুবিন তথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী (সুরা হাজর: ৮৯)
২৪. শাহীদ তথা তা সাক্ষ্যদাতা (সুরা হজ: ৭৮)
উল্লেখ্য, মহানবী (স.)-কে যেসব নামে গুণান্বিত করা হয় তা দুই প্রকার—১) এমন গুণ, যা শুধু তাঁর মধ্যেই পাওয়া যায়। যেমন আল-আকিবু, আল-হাশিরু, আল-মুকতাফা ইত্যাদি। ২) এমন গুণ, যা অন্যদের মধ্যেও পাওয়া যায়। তবে নবীজি (স.)-এর মধ্যে তা পূর্ণ মাত্রায় পাওয়া যায়। তাই এমন নাম অন্যের জন্য ব্যবহার করা বৈধ। যেমন আশ-শাহিদু, আল-মুবাশশিরু, আন-নাজিরু ইত্যাদি। (জাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা-২৮)
নবীজির আরও কিছু গুণবাচক নাম
উল্লিখিত নামগুলো ছাড়াও হাদিস ও সিরাত গ্রন্থে নবীজি (স.)-এর যেসব নাম পাওয়া যায় তার কয়েকটি হলো—১. মুকাফফা (শেষ নবী), ২. সাইয়িদু উলদি আদম (আদম সন্তানদের নেতা), ৩. হাবিবুল্লাহ (আল্লাহর প্রিয়), ৪. মুখতার (নির্বাচিত), ৫. মোস্তফা (নির্বাচিত) ৬. মুজতাবা (বাছাইকৃত), ৭. সাদিক (সত্যবাদী), ৮. মাসদুক (যাকে সত্যায়ন করা হয়েছে), ৯. আমিন (বিশ্বস্ত), ১০. সাহিবুল মিরাজ (যিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন), ১১. সাইয়িদুল মুরসালিন (নবী-রাসুলদের নেতা), ১২. সাহিবু কাউসারে (হাউসে কাউসের অধিকারী) ইত্যাদি। (বিস্তারিত দেখুন: আসমাউন-নাবি, পৃষ্ঠা: ৫৩-৭৫)

