শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নবীজির জীবনে ১২ সংখ্যাটির তাৎপর্য 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

নবীজির জীবনে ১২ সংখ্যাটির তাৎপর্য 

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনের পরতে পরতে ১২ সংখ্যাটি যুক্ত হয়ে আছে। জন্ম, ইন্তেকাল, মেরাজসহ বড় ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিশে আছে সংখ্যাটি। ফলে মুসলিম উম্মাহর কাছে মূল্যবান একটি সংখ্যায় পরিণত হয়েছে ১২।

ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ (স.) হাতির ঘটনার বছর ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা-১৫৮)


বিজ্ঞাপন


এটি প্রসিদ্ধ অভিমত। এই মত অনুযায়ী, তাঁর ওফাতের সময় ছিল ১১ হিজরি, মাসটি ছিল রবিউল আউয়াল, আর তারিখ ছিল ১২, দিনটি ছিল সোমবার, সময় ছিল চাশত নামাজের শেষ সময়, বয়স ছিল ৬৩। যদিও নবীজির জন্মের ব্যাপারে ১২ সংখ্যার বিপরীত অভিমতও আছে। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাকতুমে এসেছে, রাসুল (স.) মক্কায় বনি হাশিমের ঘাঁটিতে সোমবার সকালে ৯ রবিউল আওয়াল জন্মগ্রহণ করেন। ওই বছর হাতির ঘটনা ঘটে। (আর রাহিকুল মাকতুম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা-৪৫)

তবে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওফাত ১২ সংখ্যাকে আবারও মর্যাদার আসনে দাঁড় করিয়েছে। কেননা নবীজির ইন্তেকাল ১২ রবিউল আউয়াল হওয়ার বিষয়ে ইতিহাস ও সিরাতবিদদের দ্বিমত নেই।

পবিত্র মেরাজের সঙ্গেও ১২ সংখ্যার সম্পৃক্ততা আছে। ৬২১ খ্রিস্টাব্দ নবুয়তের ১২তম বছরে রাসুল (স.)-এর মেরাজ সম্পন্ন হয়। এটি রাসুল (স.)-এর জীবনের এক শ্রেষ্ঠ ঘটনা। এদিনই প্রত্যেক মুসলমানের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়েছিল।

মেরাজের পর নবীজির জীবনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো হিজরত। হিজরতের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাসুল (স.) আকাবা নামক স্থানে দুইবার মদিনার মুসলমানদের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতার শপথ নেন। শপথগ্রহণ শেষ হলে রাসুলুল্লাহ (স.) অঙ্গীকারবদ্ধ লোকদের মধ্য থেকে ১২ জন নেতা নির্বাচন করেন। নয়জন খাজরাজ ও তিনজন আউস গোত্র থেকে এই ১২ নেতা নির্বাচন করা হয়। 


বিজ্ঞাপন


সিরাতগ্রন্থে এসেছে, যখন এসব নেতার নির্বাচন পর্ব সমাপ্ত হয়, তখন নবী করিম (স.) তাঁদের কাছে থেকে পুনরায় অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ঈসা (আ.)-এর পক্ষ থেকে যেভাবে হাওয়ারিদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল সেভাবে আজ থেকে আপনাদের ওপর নিজ নিজ সম্প্রদায়ের দায়িত্ব অর্পিত। (ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, ৪৪৩-৪৪৬)

হিজরতের সময় নবীজি (স.) ১২ রবিউল আউয়াল মদিনার নিকটবর্তী কোবা নামক স্থানে পৌঁছান। সেখানে মদিনা অঞ্চলের প্রথম মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজের সঙ্গেও ১২ সংখ্যাটি যুক্ত হয়েছে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, রাসুল (স.)-এর মদিনার জীবনে একবার ১২ জন সাহাবি নিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের ঘটনা ঘটে। জাবের (রা.) বলেন, একবার আমরা নবী (স.)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। তখন সিরিয়া থেকে একটি ব্যবসায়ী কাফেলা খাদ্য নিয়ে আগমন করে। লোকজন সেদিকে চলে যায়, নবী (স.)-এর সঙ্গে মাত্র ১২ জন থেকে গেলেন। (বুখারি: ২০৫৮)

এভাবেই রাসুল (স.)-এর জীবনে ১২ সংখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য, আল্লাহর হিসাবেও ১২ সংখ্যার গুরুত্ব দেখা যায়। পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ‘সময় গণনায় বছরে ১২ মাসের হিসাবটি মহান আল্লাহই নির্ধারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, এর মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর