তখন মুহাম্মদ (স.)-এর বয়স ১২ বছর। মতান্তরে ১২ বছর দুই মাস ১০ দিন (ইবনে জাওযি, পৃ-০৭)। চাচা আবু তালিব বাণিজ্যে যাবেন। কিশোর মুহাম্মদ (স.)-ও সঙ্গে যাওয়ার আবদার করলেন। আবদার ফেলতে পারলেন না আবু তালিব। এ আবদার নিছক শখ ছিল না। কিশোর বয়সেও তিনি চাইতেন- যেকোনোভাবে চাচার কষ্ট লাঘব হোক।
আবু তালিব তাঁকে নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা হলেন। সফরের একপর্যায়ে বসরায় গিয়ে উপস্থিত হন। বসরা ছিল শাম-রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি স্থান এবং হুরানের কেন্দ্রীয় শহর। সেসময় তা আরব-উপদ্বীপের রোম-আয়ত্তাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল। এ শহরে জারজিস নামের এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক বসবাস করতেন। তাঁর উপাধি ছিল বুহায়রা বা বাহিরা। এ উপাধিতেই তিনি সকলের কাছে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন। মক্কার ব্যবসায়ী-দল যখন বসরায় শিবির স্থাপন করেন, তখন পাদ্রি গির্জা থেকে বেরিয়ে তাঁদের কাছে আসেন এবং আপ্যায়িত করেন। অথচ এর আগে কখনো তিনি এভাবে গির্জা থেকে বেরিয়ে কোনো বাণিজ্য-কাফেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
বিজ্ঞাপন
তিনি কিশোর মুহাম্মদের (স.) অবয়ব, আচরণ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখেন। বুঝতে পারেন ইনিই হচ্ছেন বিশ্বমানবের মুক্তির দিশারি আখেরি নবী (স.)। তারপর মুহাম্মদের (স.) হাত ধরে তিনি বলেন, ‘ইনি হচ্ছেন বিশ্ব জাহানের সরদার। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ব-জাহানের রহমতস্বরূপ রাসুল হিসেবে মনোনীত করবেন।’
আবু তালিব এবং কোরাইশের লোকজন বললেন, ‘আপনি কীভাবে অবগত হলেন যে তিনিই হবেন আখেরি নবী?’ বুহায়রা বললেন, ‘গিরিপথের ওই প্রান্ত থেকে তোমাদের আগমন যখন ধীরে ধীরে দৃষ্টিগোচর হয়ে আসছিল, আমি প্রত্যক্ষ করলাম সেখানে এমন কোনো বৃক্ষ কিংবা প্রস্তরখণ্ড ছিল না, যা তাঁকে সেজদা করেনি। এরা নবী-রাসুল ছাড়া সৃষ্টিরাজির অন্য কাউকে কখনো সেজদা করে না। অধিকন্তু ‘মোহরে নবুয়ত’ দেখেও আমি তাঁকে চিনতে পেরেছি। তাঁর কাঁধের নিচে নরম হাড্ডির পাশে ‘সেব’ ফলের আকৃতিবিশিষ্ট একটি দাগ রয়েছে, সেটিই হচ্ছে ‘মোহরে নবুয়ত’। আমাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলসূত্রে আমি এসব বিষয় সম্পর্কে অবগত।’
এরপর বুহায়রা আবু তালিবকে বললেন, ‘তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আর বিদেশ-ভ্রমণ করবেন না। দ্রুত তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। কারণ তাঁর পরিচয় অবগত হলে ইহুদি ও রোমীয়রা তাঁকে হত্যা করে ফেলতে পারে।’ এ কথা জানার পর তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী আবু তালিব তাঁকে কয়েকজন গোলামের সঙ্গে মক্কা ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। (ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃ-১৮০; জাদুল মাআদ, প্রথম খণ্ড, পৃ-১৭)
এভাবে নবুওতের আলোকঘেরা এক রহস্যময় জীবনের পথে এভাবেই হাঁটতে থাকেন কিশোর মুহাম্মদ (স.)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবী (স.)-এর শৈশব, কৈশোরসহ সমগ্র সিরাত জানার, বুঝার এবং নবীজির দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিজ্ঞাপন
(সূত্র: আর রাহিকুল মাখতুম)

