পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থান মসজিদ। আল্লাহ তাআলার কাছে এর চেয়ে প্রিয় কোনো জায়গা নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার।’ (মুসলিম: ১৪১৪)
মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের আল্লাহ তাআলা খুব পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’ (সুরা তাওবা: ১৮)। প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি: ৪৫০)
বিজ্ঞাপন
ইসলামের দৃষ্টিতে মসজিদ আবাদ করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের সওয়াব আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, এমনকি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মসজিদ থেকে ময়লা-আবর্জনা দূর করার সওয়াবও (যা আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে পুণ্যের কাজ)। অন্যদিকে আমার উম্মতের পাপরাশিও আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কোরআনের কোনো সুরা বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চেয়ে বড় গুনাহ আর দেখিনি। (আবু দাউদ: ৪৬১)
মসজিদ যেন অপবিত্র না হয়, দুর্গন্ধযুক্ত না হয়, সেজন্য সব মুসল্লিকে সতর্ক থাকতে হবে। মসজিদকে অপবিত্র করা, ময়লাযুক্ত করা কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত করার অধিকার কারো নেই। জাবির ইবনে আবুদুল্লাহ (রা.) থেকে বলেন, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ রসুনজাতীয় উদ্ভিদ খাবে, কোনো কোনো সময় তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন বা মুলা খাবে সে যেন আমার মসজিদের কাছেও না আসে। কেননা মানুষ যেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায় ফেরেশতারাও সেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায়। (মুসলিম: ১১৪১)
মসজিদ সব সময় পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুবাসিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিজি: ৫৯৪)
মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে এর পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমি মসজিদ-ই-নববিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় একজন ব্যক্তি আমার দিকে একটা কাঁকর নিক্ষেপ করল। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)। তিনি বললেন, যাও, এ দুজনকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাদের নিয়ে তার কাছে এলাম। তিনি বললেন, তোমরা কারা? তোমরা কোন স্থানের লোক? তারা বলল, আমরা তায়েফের অধিবাসী। তিনি বললেন, তোমরা যদি মদিনার লোক হতে, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতাম। তোমরা দুজনে আল্লাহর রাসুল (স.)-এর মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেছ! (বুখারি: ৪৭০)
বিজ্ঞাপন
মসজিদে যত্রতত্র থুথু ফেলা নিষিদ্ধ। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফফারা হচ্ছে তা মুছে ফেলা। (বুখারি: ৪১৫)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) কেবলার দিকের দেয়ালে নাকের শ্লেষ্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করলেন। (বুখারি: ৪০৭)
যে কেউ স্বেচ্ছায় মসজিদের সেবা করতে পারে। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কালো বর্ণের নারী মসজিদ ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। নবী (স.) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিরা বলেন, সে মারা গেছে। তিনি বলেন, তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের কাছে গেলেন এবং তার জানাজার সালাত আদায় করলেন। (বুখারি: ৪৫৮)
সুতরাং আপনি এ ধরনের ক্ষুদ্র কাজ করেও প্রশংসার দাবিদার হতে পারেন। প্রিয়নবী (স.)-এর দোয়া পেতে পারেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে তিনি মসজিদের সম্মান বজায় রাখা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কত গুরুত্ব দিতেন।
একবার এক বেদুইন এসে মসজিদের কোণে প্রস্রাব শুরু করে দিল। সে মসজিদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম রাগান্বিত হয়ে তাকে বাধা দিতে গেলেন। কিন্তু প্রিয়নবী (স.) তাদের বাধা দিলেন। তাই কেউ মসজিদের আদব রক্ষা না করলে তাকে হেকমতের সঙ্গে বোঝাতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে যে, একবার এক বেদুইন মসজিদে প্রস্রাব করে দিল। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ (স.) তাদের বলেন, তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার প্রস্রাবের ওপর এক বালতি পানি অথবা এক পাত্র পানি ঢেলে দাও। কারণ তোমাদের নম্র ব্যবহারকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি। (বুখারি: ৬১২৮)
সুতরাং মসজিদের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করতে হবে। এর সম্মান বজায় রাখতে হবে। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

