রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রিয়নবীর (স.) দুধপানের দিনগুলো

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রিয়নবীর (স.) দুধপানের দিনগুলো

আরবের মরুর বুকে কোরাইশ বংশে আব্দুল্লাহর ঘরে ৫৭০ সালে পৃথিবীতে এসেছিলেন এক টুকরো চাঁদ। মা আমেনার কোলের সেই চাঁদের টুকরোটি ছিলেন মানবতার মুক্তির দূত, রাহমাতুল্লিল আলামিন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (স.)।

শিশু মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে মা আমেনা বলেন, ‘সে যখন আমার পেটে আসে তখন দেখলাম আমার শরীর থেকে একটি নূর বের হলো, যার আলোচ্ছটায় আমি স্পষ্ট দেখলাম সুদূর সিরিয়ার ‘বুছরার মহল’। তাছাড়া সে ভূমিষ্ঠ হয়েছে দুই হাত মাটিতে ঠেকিয়ে এবং আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম)


বিজ্ঞাপন


শিশুকালে মহানবী (স.) তিনজন নারীর দুগ্ধ পান করেছিলেন বলে জানা যায়। তারা হলেন, মা আমিনা, আবু লাহাবের আজাদকৃত দাসী সুওয়াইবা এবং তায়েফের হালিমা সাদিয়া (রা.)। আল্লামা ইদরিস কান্ধলভি (রহ.)সহ একদল সিরাত গবেষক ‘নবী (স.) জন্মের পর কয়েক দিন আপন মায়ের দুধ পান করেন’ দাবি করলেও আমিনার দুধ পান করানোর বিষয়টি বেশির ভাগ সিরাত গ্রন্থে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, স্বামী হারানোর শোক ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে তাঁর বুকে দুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছিল। (খাতামুন নাবিয়্যিন, পৃষ্ঠা-১০৮)

বেশির ভাগ সিরাত গবেষকের মতে, জন্মের পর প্রায় এক সপ্তাহ সুওয়াইবা রাসুলুল্লাহ (স.)-কে দুধ পান করান। এরপর অভিজাত আরব পরিবারের রীতি অনুসারে তাঁকে তায়েফের বনি সাদ গোত্রের হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর হাতে দুগ্ধপান ও প্রতিপালনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। সে সময় অভিজাত আরব পরিবারগুলো সন্তানদের দুগ্ধপান ও প্রাথমিক প্রতিপালনের জন্য গ্রামে পাঠাত, যাতে গ্রামের নির্মল পরিবেশে বেড়ে ওঠে এবং বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শিখতে পারে। একই সঙ্গে শহুরে জীবনের ঝঞ্ঝাট থেকে দূরে থাকে।

হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর বর্ণনা মতে, মহানবী (স.) পিতৃহীন হওয়ায় তাঁর কাফেলার সঙ্গী বনু সাদের নারীরা রাসুলুল্লাহ (স.)-কে দুগ্ধদানের জন্য নিতে অস্বীকার করে। অন্যদিকে হালিমা (রা.) কোনো শিশু না পাওয়ায় মহানবী (স.)-কে নিতে সম্মত হন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দায়িত্ব গ্রহণের পর বহুমুখী বরকতের দেখা পান তিনি। পশু, পশুর দুধ, জীবন ও জীবনোপকরণ সব কিছুতে বরকত অবলোকন করেন। এমনকি চরম দুর্ভিক্ষের মধ্যেও তারা অভাবমুক্ত ছিলেন, যা দেখে বনু সাদের অন্যান্য নারী তাকে ঈর্ষা করত। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা-১১৪)

শিশু মোহাম্মদ (স.)-কে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব নেয়ামত যেন হালিমা সাদিয়ার উপর উপচে পড়ছিল। তিনি বলেন, ‘তাকে (শিশু মুহাম্মদ স.-কে) কোলে বসিয়ে যখন স্তন তার মুখে পুরে দিলাম তখনই আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, স্তন ভরপুর হয়ে উঠল। শিশুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হলো। এরপর তার দুধভাইও খেয়ে পরিতৃপ্ত হলো। দুধ খেয়ে দুভাই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ও আমার স্বামীও শুয়ে পড়লাম ঘুমানোর উদ্দেশ্যে। কারণ এতদিন ঘুমিয়েছি খুব সামান্যই। হঠাৎ আমার স্বামীর দৃষ্টি পড়ল উষ্ট্রী দুটির দিকে। তিনি বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে এগিয়ে গেলেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। দেখলেন ওলানভরা দুধ। এরপর তিনি দুধ দোহন করলেন, নিজে পান করলেন, আমিও পান করলাম। দুজনেই পরিতৃপ্ত হয়ে জীবনের সেরা সুখময় একটি রাত কাটালাম।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম)


বিজ্ঞাপন


হালিমা (রা.)-এর দুগ্ধপানের সূত্রে আবদুল্লাহ, আনিসা ও জুদামা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দুধভাই ও বোন ছিলেন। তারা ছিলেন হালিমার স্বামী হারিস ইবনে আবদুল উজ্জার সন্তান। অন্যদিকে সুওয়াইবা নবীজি (স.) ছাড়াও হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.), আবু সালামা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ ও নিজ ছেলে মাসরুহকে দুধ পান করান। ফলে তারাও ছিলেন নবী করিম (স.)-এর দুধভাই। হামজা (রা.)-কে বনু সাদের যে নারী দুধ পান করিয়েছিলেন তিনি মহানবী (স.)-কেও দুধ পান করিয়েছিলেন। ফলে হামজা (রা.) দুই সূত্রে মহানবী (সা.)-এর দুধভাই ছিলেন। (জাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা-২৭; আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-৭২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবী (স.)-এর স্মরণ ও ভালোবাসা জাগ্রত রাখতে বেশি বেশি সিরাত পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর