ইসলামি শরিয়তে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দা ফরজ। পবিত্র কোরআনের সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে পুরুষের পর্দা এবং একই সুরার ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারীর পর্দার বিধান ঘোষণা করেন। পর্দা শব্দের আরবি প্রতিশব্দ ‘হিজাব’। এর শাব্দিক অর্থ গোপন করা, আড়াল করা, ঢেকে রাখা ইত্যাদি। পরিভাষায় প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের আপাদমস্তক গায়রে মাহরাম পুরুষ থেকে আড়াল করে রাখাকে হিজাব বা পর্দা বলে।
মাহরাম (যাদের সঙ্গে বিয়ে হারাম) পুরুষদের সামনে নারীদের সতরের পরিমাণ হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং পেট ও পিঠ। অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চারাও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। আর বেগানা পুরুষদের সামনে নারীর শরীর ঢেকে পর্দা করা জরুরি। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ৬/৩৭৪, সুরা নুর: ৩১, কিফায়াতুল মুফতি: ৫/৩৮৭, ৩৮৯)
বিজ্ঞাপন
ইসলামের প্রথম যুগে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নারীদের মুখমণ্ডল, হাতের কবজি ও পায়ের পাতা খোলা রাখার অবকাশ ছিল; যদিও বিধানগত দিক থেকে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ফেতনার আশঙ্কায় ইসলামি আইনবিদরা বলেন, পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডল, হাতের কবজি, পায়ের পাতাসহ সম্পূর্ণ শরীর ভালোভাবে ঢেকে রাখা জরুরি। তবে বিশেষ প্রয়োজনে মুখ খোলা যেতে পারে। যেমন—চিকিৎসক, বিচারক বা সাক্ষী, যাঁরা কোনো ব্যাপারে নারীকে দেখে সাক্ষ্য বা ফয়সালা দিতে বাধ্য হন। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৪০৬, ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৪/১০৬)
উল্লেখ্য, ইসলামি পর্দার কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যেমন- ১) মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে নেওয়া। বোরকা বা অন্য কোনো পন্থায় গোটা শরীর ঢেকে রাখা জরুরি। ২) পরিহিত জামা ফ্যাশনমূলক না হওয়া। ৩) বোরকার কাপড় মোটা হওয়া, যাতে শরীরের আকৃতি অনুধাবন করা না যায়। ৪) বোরকা ঢিলেঢালা হওয়া। (আবু দাউদ: ২/৫৬৭, মুসলিম: ২/২০৫, আহসানুল ফতোয়া: ৮/২৮, তিরমিজি: ২/১০৭)
প্রসঙ্গত, নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত হলো সতর ঢেকে রাখা। নামাজে পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ। নারীদের মুখমণ্ডল, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও টাখনুর নিচে পায়ের পাতা ছাড়া সব অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজ। তবে বিনা কারণে পুরুষের মাথা, পেট-পিঠ, হাতের কনুই খোলা রেখে নামাজ পড়লে তা আদায় হয়ে গেলেও মাকরুহ হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের প্রত্যেকটি বিধি-বিধান যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

