সকালের ঘুমে জীবনের বরকত নষ্ট হয়

ঘুম আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত। ঘুম ছাড়া কারও পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ঘুমের উপযোগী সময় রাত। এজন্য মহান আল্লাহ রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং শীতল করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন ঘুম।’ (সুরা ফুরকান: ৪৭)

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাদিসে। তাই ইশার নামাজ আদায়ের পর কোনো কাজ না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) সন্ধ্যায় ঘুমানো এবং ইশার নামাজের পর গল্প-আড্ডা দেওয়া পছন্দ করতেন না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকেও রাত করে ঘুমানো সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং তারপর নৈশ আলাপ করেননি। (ইবনে মাজাহ: ৭০২)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ইশার নামাজের আগে ঘুমানো এবং ইশার পর কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না। (বুখারি: ৭৩৭, মুসলিম: ১৪৯৪)

ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। রাসুল (স.) নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করতেন। এরপর ভোরে উঠে পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করতে পারলে প্রফুল্লচিত্তে এবং পবিত্র মনে সকাল শুরু হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমায়, তখন শয়তান তার মাথার শেষভাগে তিনটি গিরা দেয়। প্রতিটি গিরার সময় সে এ কথা বলে কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখনো রাত অনেক রয়ে গেছে, শুয়ে থাকো। অতঃপর সে ব্যক্তি যদি জেগে ওঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর যদি সে অজু করে, তবে দ্বিতীয় গিরা খুলে যায়। আর যদি সে নামাজ আদায় করে, তাহলে সব গিরাই খুলে যায়। ফলে প্রফুল্লতার সঙ্গে পবিত্র মনে তার সকাল হয়, অন্যথায় আলস্যের সঙ্গে অপবিত্র মনে তার সকাল হয়।’ (বুখারি: ৩০৯৬)

ফজরের নামাজের পর সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। দিনের শুরুটা ঘুমে কেটে যাওয়ার ফলে দিন সংকীর্ণ হয়ে যায়। কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়। পক্ষান্তরে ফজরের নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত এবং ইশরাক নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু করতে মহান আল্লাহ সারা দিনের জন্য বান্দার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে দিনটি হয়ে ওঠে বরকতময়।

সাখর আল-গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাঁর পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (আবু দাউদ: ২৬০৮)

দিনকে বানানো হয়েছে জীবন-জীবিকা ও সার্বিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘এবং করেছি দিনকে জীবিকা আহরণের সময়’ (সুরা নাবা: ১১)। তবে দিনের বেলায় দুপুরে হালকা বিশ্রাম নিলে রাতে ইবাদতের শক্তি অর্জন হয়। তাউস (রহ.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দিনে বিশ্রাম নিয়ে রাতের ইবাদতের শক্তি অর্জন করো আর সেহরি খেয়ে দিনের রোজার শক্তি অর্জন করো।’ (বায়হাকি: ৪৭৪১; মুসান্নাফে আবদির রাজজাক: ৭৬০৩)