ইসলামে গোত্র-জাত-বর্ণের বৈষম্য না থাকলেও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে কিছু স্থানের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। যেমন—পৃথিবীর কেন্দ্র পবিত্র মক্কা সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। তারপর মদিনা শরিফ। এরপর নবী-রাসুলদের স্মৃতিধন্য শাম অঞ্চল (সিরিয়া, জর্দান ও ফিলিস্তিন) বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। তেমনি ভারতবর্ষও কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদার দাবিদার।
আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় সর্বপ্রথম মানব ও নবী আদিপিতা হজরত আদমকে (আ.)-কে বর্তমান শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়েছিলেন, যা ছিল একসময় হিন্দুস্থানেরই অংশ। সেখান থেকেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমি পবিত্র মক্কায় রওনা হয়েছিলেন। যেহেতু প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) হিন্দুস্তানের মাটিতে সর্বপ্রথম এসেছিলেন, এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়, নবীদের প্রতি মহান আল্লাহ তাআলার বার্তাবাহক ফেরেশতাকুল সর্দার হজরত জিব্রাঈল (আ.)ও পৃথিবীতে সর্বপ্রথম হিন্দুস্তানের মাটিতে এসেছিলেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-কে হিন্দুস্তানের মাটিতে পাঠিয়েছিলেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৯৯৪) হাদিস বিশারদদের মতে, হাদিসটি সহিহ।
বিজ্ঞাপন
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আদম (আ.) হিন্দুস্তান থেকে হেঁটে এক হাজার বার কাবা শরিফ জেয়ারতে এসেছিলেন। (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ২৭৯২) হাদিসটির সনদ জইফ বা দুর্বল।
হজরত সুদ্দি (রহ.) বলেন, হজরত আদম (আ.) সর্বপ্রথম হিন্দুস্তানের মাটিতে অবতরণ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে হাজরে আসওয়াদ পাথরটিও ছিল। সঙ্গে জান্নাতের কিছু পাতাও ছিল। তিনি তা হিন্দুস্তানের মাটিতে ছিটিয়ে দিলেন। এতে অনেক সুগন্ধিগাছ উৎপন্ন হয়। (আখবারু মাক্কাহ: ২৩) হাদিসটির সনদ হাসান (সূত্রগতভাবে গ্রহণযোগ্য)।
হাদিসে ভারতবর্ষ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অনেক বাণীই বিদ্যমান। এগুলোর আলোকে প্রমাণিত হয়, ভারতবর্ষের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। হজরত সাওবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের দুই দলকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের কঠিন আগুন থেকে মুক্তি দেবেন, এক হলো যারা ন্যায়ের পক্ষে হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে, দ্বিতীয় দল হলো, যারা কেয়ামতের আগে মরিয়মপুত্র ঈসা (আ.)-এর সঙ্গী হবে। (সুনানে নাসায়ি: ৩১৭৫, মুসনাদে আহমদ: ২২৩৯৬) হাদিসটি সহিহ (বিশুদ্ধ)।
রাসুলুল্লাহ (স.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই ভারতবর্ষের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের এক নিগূঢ় আত্মিক সুসম্পর্ক ছিল। ফলে প্রথম হিজরি থেকেই মুসলমানদের বারবার ভারত উপমহাদেশে আগমন করতে হয়। মূলত ইসলাম ভারতবর্ষে একটি উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিল। সেই সূত্র ধরে সুদীর্ঘ সময় ধরে মুসলিমরাই শাসন করেছে ভারতবর্ষ। ভবিষ্যতেও হিন্দুস্তানে খেলাফতের ব্যাপারে মহানবী (স.)-এর হাদিস রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) হিন্দুস্তানের আলোচনা করে বললেন, তোমাদের একদল লোক অবশ্যই হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করে এমনভাবে বিজয় লাভ করবে যে, সেখানকার (জালেম) শাসকবর্গকে শিকলে বন্দি করে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। অতঃপর তারা চলতে চলতে শাম দেশে (বর্তমান সিরিয়া, জর্দান, ফিলিস্তিন) ঈসা ইবনে মরিয়াম (আ.)-এর সঙ্গে যুক্ত হবে..।’ (মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহাওয়াইহ: ৫৩৭; আলফিতান, নুআইম ইবনে হাম্মাদ: ১২৩৬)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) হিন্দুস্তানে যুদ্ধের ব্যাপারে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদি আমি সে সময় পাই তাতে আমার জান-মাল খরচ করব। যদি আমি এতে শহীদ হই, তাহলে আমি সর্বোত্তম শহীদ হব। আর যদি বিজয়ীর বেশে ফিরে আসি, তাহলে আমি আবু হুরাইরা জাহান্নাম থেকে মুক্ত। (সুনানে নাসায়ি: ৩১৭৪, মুসনাদে আহমদ: ৭১২৮) হাদিসটি হাসান।
দীর্ঘ আলোচনার পর এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, ইসলাম ও মুসলমানদের সুউজ্জ্বল ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অঞ্চলের নাম ভারতবর্ষ। আল্লাহ তাআলা এই অঞ্চলের মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি রক্ষা এবং ভারতবর্ষের মর্যাদা রক্ষার তাওফিক দান করুন। আমিন।

