বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মানবজাতি থেকেই কেন নবী-রাসুল?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

মানবজাতি থেকেই কেন নবী-রাসুল?

পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষই নবী ও রাসুল হয়ে থাকেন। তাঁরা আল্লাহর মনোনীত এবং তিনি তাঁদের সব ধরনের চারিত্রিক ও মানবিক দোষত্রুটি থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই তারা ছিল আমার মনোনীত উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা সোয়াদ: ৪৭)

নবী-রাসুলরা মানুষ ছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী) আপনি বলুন, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, আমার কাছে ওহি এসেছে যে তোমাদের উপাস্য কেবলমাত্র একজন।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)


বিজ্ঞাপন


মূলত মানবসমাজকে সৃষ্টিকর্তার পথ দেখানোর জন্য মানুষের মধ্য থেকে নবী-রাসুল নির্বাচন করেছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে তাদের মধ্য থেকে রাসুল পাঠিয়েছেন, যিনি তার আয়াত তাদের কাছে পাঠ করেন, তাদের পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা আগে বিভ্রান্তির মধ্যে ছিল।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬৪)

আল্লাহ তাআলা চাইলে ফেরেশতাদের মধ্য থেকে নবী-রাসুল পাঠাতে পারতেন। কিন্তু সেটি ছিল অযৌক্তিক। কেননা ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনোভাবের কারণে তাঁদের প্রতি অবিশ্বাসীদের অনেকেই ঈমান আনত না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের (মানুষ) কাছে পথনির্দেশ আসে, তখন তাদেরকে কেবল ঈমান আনা থেকে বিরত রাখে তাদের এই কথা যে, ‘আল্লাহ কি মানুষকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছে? বলুন, যদি ফেরেশতারা নিশ্চিন্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করত তাহলে আমি অবশ্যই আকাশ থেকে ফেরেশতাদের রাসুল হিসেবে পাঠাতাম।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৯৪-৯৫)

মূলত নবী-রাসুলরা মানুষ হওয়ার কারণেই সবার পক্ষে তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করা সহজ ছিল। কিন্তু কাফেরদের কাছে এ যেন মহাবিস্ময়কর বিষয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদেরকে (নবীদের) এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাবার গ্রহণ করবে না এবং তারা চিরস্থায়ীও নয়।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮)

শুধু বিস্ময়কর নয়, জালেমদের চিরাচরিত নিয়মই হলো- নিজে পথভ্রষ্টতার শিকার হওয়া, অন্যদেরও শিকার করা। যেকোনোভাবে দীনগ্রহণ থেকে অন্যদের বিরত রাখতে তারা যেন বদ্ধপরিকর। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের (কাফেরদের) অন্তর থাকে অমনোযোগী এবং যারা জালিম তারা গোপনে শলাপরামর্শ করে (বলে), সে তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তোমরা কি দেখে-শুনে তার জাদুর কবলে পড়বে? (সুরা আম্বিয়া: ৩)


বিজ্ঞাপন


উল্লিখিত আয়াতে মহানবী (স.)-কে নিয়ে কাফেরদের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তারা পবিত্র কোরআনের কোনো আয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনত না এবং শুনলেও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণাও করত না। এরপর তারা একে অপরের সঙ্গে কানাঘুষা শুরু করত। অথচ মহান আল্লাহ তাদের অন্তর ও মুখের সব কথা সম্পর্কে অবগত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (নবীজি) বলেন, আকাশ ও পৃথিবীর সব কথা সম্পর্কে আমার রব অবগত এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আম্বিয়া: ৪)

তারা বলত, মুহাম্মদ (স.) আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ। তাই সে নবী হওয়ার দাবি করতে পারে না। তাদের দুষ্টু আচরণ মহান আল্লাহ ফাঁস করেছেন এভাবে—‘তারা বলে, এ কেমন রাসুল যে আহার করে এবং হাটবাজারে চলাফেরা করে, তার কাছে কোনো ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ হলো না যে তার সঙ্গে সতর্ককারী হিসেবে থাকত?’ (সুরা ফুরকান: ৭)

মূলত এ ধরনের কথা অতীতেও নবী-রাসুলদের বলা হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘এইভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখন কোনো রাসুল এসেছে তারা তাকে বলেছে, তুমি তো জাদুকর বা উন্মাদ।’ (সুরা জারিয়াত: ৫২)

আদিমানব আদম (আ.) থেকে শুরু করে যুগে যুগে মহান আল্লাহ অসংখ্য নবী-রাসুলকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন মানুষের মধ্য থেকে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অজ্ঞতা ও বাড়াবাড়ি থেকে হেফাজত করুন। আমাদের হেদায়েত করুন। হক চেনার ও বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর