রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

মেরাজের শিক্ষা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

মেরাজের শিক্ষা

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা শবে মেরাজ। ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরো নবুয়তের ইতিহাসেও এটি এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রাসুল হজরত মোহাম্মদ (স) ছাড়া অন্য কোনো নবী এ পরম সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেননি। ‘হে রাসুল! আমি আপনাকে গোটা মানবজাতির জন্য রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছি’ (সুরা সাবা: ২২)।

মেরাজের সত্যতা পবিত্র কোরআনুল কারিম এবং মাশহুর, মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ বলেন—


বিজ্ঞাপন


‘তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয়নি এবং তিনি সীমা লঙ্ঘনও করেননি। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলি অবলোকন করেছেন’ (সুরা নাজম: ১৭-১৮)

লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজের অর্থ উরধারোহনের রাত। স্বচক্ষে বেহেশত-দোজখ অবলোকন, পূর্ববর্তী নবী-রসুলদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পরিচিতি, সুবিশাল নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ, মহাকাশ, আরশ, কুরসি প্রভৃতি সামনাসামনি দেখা, সর্বোপরি মহান রবের সঙ্গে পবিত্র দিদারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিবকে, একইভাবে তাঁর উম্মতকেও সৌভাগ্যমণ্ডিত করেন। এ রজনিতেই শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। মেরাজ থেকে ফিরে রাসুলুল্লাহ (স.) সুরা বনি ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি প্রশিক্ষণ উম্মতের সামনে পেশ করেন-

১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই বন্দেগি করো।

২. মা-বাবার সাথে উত্তম ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে ‘উফ’ শব্দটিও বলো না। তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সঙ্গে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বলো। আর তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে বিনয়ী থেকো আর বলো ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন শৈশবে তারা আমাদের লালন-পালন করেছেন।’

৩. তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন।

৪. আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দান কর আর অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের হক আদায় কর।

৫.অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।

৬. হকদারদের হক আদায়ে অপারগ হলে তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলো।

৭. একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না, আবার একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।

৮. দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের হত্যা কোরো না। কারণ তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহাপাপ ।

৯. জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি নিকৃষ্ট কাজ ও মন্দ পথ।

১০. কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা কোরো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি, তবে সে যেন প্রতিশোধের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে।

১১. এতিমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না। সম্পদের ব্যাপারে তার বয়োপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করো আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

১২. ওজনে কম দিয়ো না। সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ।

১৩. যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সেগুলোর পেছনে লেগো না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।

১৪. পৃথিবীতে দম্ভভরে চলো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনওই পর্বতসম হতে পারবে না। এগুলো সবই মন্দ ও ঘৃণিত কাজ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩-৩৮)।

এছাড়াও উম্মতে মুহাম্মদির জন্য কয়েকটি তোহফা দানের কথা হাদিসে এসেছে, যেমন—


বিজ্ঞাপন


এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফজিলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সমান।

দুই. সুরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত মেরাজেই অবতীর্ণ হয়। এ আয়াতগুলোতে উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহস্বরূপ।

তিন. উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদের ক্ষমা করার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে মেরাজে।

চার. নামাজে যে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়া হয়, সেটিও মেরাজের উপহার।

মেরাজুন্নবীর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (স.) ও তাঁর উম্মতকে মহান সৃষ্টিকর্তা সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এই সম্মানের যথাযথ মূল্যায়ন করার তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর