শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কোন আসমানে কার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন মহানবী (স.)

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

কোন আসমানে কার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন মহানবী (স.)

ইতিহাসে মহাবিস্ময়কর বাস্তবতার নাম মেরাজে রাসুল (স.)। মহানবী (স.)-এর নবুয়তি জীবনের অন্যতম মোজেজা এই মেরাজ। ‘নিশ্চয়ই তিনি তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছেন।’ (সুরা নাজম: ১৮)

প্রথম আসমান: এই রাতে জিব্রাইল (আ.)-এর সঙ্গে প্রথম আসমানে পৌঁছলে হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এর আগে প্রথম আসমানে এসে জিব্রাইল (আ.) দরজা উন্মুক্ত করতে অনুরোধ করলে অপর প্রান্ত হতে প্রশ্নে আসে—কে আপনি? তিনি বললেন, আমি জিব্রাইল। প্রশ্ন করা হয়, আপনার সঙ্গে কে? বললেন, মুহাম্মদ। প্রশ্ন হয়, আপনি কি তাঁর কাছে প্রেরিত হয়েছেন? বললেন, হ্যাঁ।


বিজ্ঞাপন


অতঃপর প্রথম আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তাঁরা উপরে উঠে আসেন। নবীজি (স.) বলেন, ওখানে এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যার ডানদিকে দেখা গেল রূহের একটি ঝাঁক, বামদিকে আরেক ঝাঁক। ওই ব্যক্তি ডানদিকে তাকালে হাসেন আর বামদিকে তাকালে কাঁদেন। তিনি আমাকে দেখে অভ্যর্থনা জানালেন এবং বললেন, মারহাবা হে মহান পুত্র! মারহাবা হে মহান নবী!

নবীজি (স.) জিব্রাইলকে প্রশ্ন করলেন, ইনি কে? জিব্রাইল বললেন, তিনি আদম (আ.)। তাঁর ডান ও বামদিকে যাদের দেখলেন তারা তাঁর আওলাদ। জান্নাতিরা ডানদিকে; আর বামদিকেরগুলো দোজখি। তাই তিনি ডানদিকে তাকিয়ে হাসেন এবং বামদিকে তাকিয়ে কাঁদেন। (বুখারি: ৩৪৯)

দ্বিতীয় আসমান: জিব্রাইল (আ.) নবীজিকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছলে সেখানেও জিজ্ঞাসা করা হয়, কে? তিনি জবাব দিলেন, জিব্রাইল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মদ। আবার প্রশ্ন হল, তিনি কি আহূত হয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে আনার জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। দরজা খুলে দেওয়া হলে সেখানে দু’খালাত ভাই অর্থাৎ হজরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। জিব্রাইল (আ.) বললেন, তাঁদেরকে সালাম করুন। মহানবী (স.) দুজনকে সালাম দিলে তাঁরাও সালামের জওয়াব দিলেন এবং নবীজিকে (স.) মারহাবা বলে দোয়া করলেন।

তৃতীয় আসমান: এরপর জিব্রাইল তাঁকে তৃতীয় আকাশে নিয়ে গিয়ে আগের মতো প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে দরজা খুলে দেওয়া হলে সেখানে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। জিব্রাইল (আ.) বললেন, ইনি হজরত ইউসুফ। আপনি তাঁকে সালাম করুন। নবীজি বলেন, আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর দিলেন এবং উত্তম ভাই ও মহানবী বলে মারহাবা দিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁকে গোটা রূপ-সৌন্দর্যের অর্ধেকটাই দান করেছিলেন।

চতুর্থ আসমান: একই পদ্ধতিতে চতুর্থ আকাশে পৌঁছালে সেখানে হজরত ইদরিস (আ.)-এর সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় হল। তাঁকেও নবীজি সালাম দিলেন এবং তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, উত্তম ভাই ও মহানবীর জন্য মারহাবা।

পঞ্চম আসমান: পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.)-এর সঙ্গে সালামের আদান-প্রদান শেষে তিনিও উত্তম ভাই ও মারহাবা জানালেন।

ষষ্ঠ আসমান: ষষ্ঠ আসমানে দেখা হয় হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে। জিব্রাইল (আ.) পরিচয় করিয়ে দিলেন- ইনি মুসা। তাঁকে সালাম করুন। নবীজি সালাম করলেন এবং মুসা (আ.) সালামের উত্তর দিয়ে উত্তম ভাই ও মারহাবা বলে সম্বোধন জানালেন। নবীজি (স.) বলেন, আমরা যখন সেখান থেকে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম, তখন হজরত মুসা (আ.) ক্রন্দন করতে লাগলেন। কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এই যুবক আমার পরে প্রেরিত হয়েছে। তদুপরি তাঁর উম্মত আমার উম্মতের চেয়েও অনেক বেশি জান্নাতে যাবে। একথা ভেবেই আমি কাঁদছি।

সপ্তম আসমান: এরপর সেখান থেকে নবীজিকে সপ্তম আকাশে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে দেখলেন, তখন তিনি বায়তুল মামুরে ঠেস দিয়ে উপবিষ্ট অবস্থায়। বায়তুল মা‘মুর সেই স্থান, যেখানে প্রত্যহ এমন সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদত করেন, যাদের পালা আর কখনও আসে না।

হজরত ইব্রাহিমও (আ.) নবীজিকে দেখে অভ্যর্থনা জানালেন। অতঃপর তিনি নবীজিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, মুহাম্মদ! আপনার উম্মতকে আমার সালাম বলুন এবং তাদেরকে অবগত করুন যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র, এর পানি সুমিষ্ট। জান্নাত হচ্ছে খুব পরিচ্ছন্ন ও সমতল। এর বৃক্ষ হচ্ছে-

سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله، الله أكبر ولا حول ولا قوة إلا بالله العلى العظيم. (তিরমিজি: ৩৪৬২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহানবী (স.)-এর মেরাজের প্রতি বিশ্বাসে অটল-অবিচল রাখুন। মেরাজে পাওয়া তোহফা নামাজকে যথাযথ কায়েম করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর