সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে ইসলামি নির্দেশনা কী?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০১:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে ইসলামি নির্দেশনা কী?

মানবজীবনে নানা সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। আর মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন, এই সমস্যার সমাধানে ইসলামি নির্দেশনার চেয়ে টেকসই কোনো সমাধান নেই। আসুন জেনে নেই- অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে কী সমাধান দিয়েছে ইসলাম।

১) ঈমান ও তাকওয়া: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি সেই সময় জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান ও জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে, অতঃপর তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করেছি।’ (সুরা আরাফ: ৯৬)


বিজ্ঞাপন


২) তাওয়াক্কুল: তাওয়াক্কুল অর্থ ভরসা করা, নির্ভর করা। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো বিপদ-আপদ ও যুদ্ধ-সংকটে ঘাবড়ে যায় না, বরং আল্লাহর ওপর দৃঢ় আস্থা রাখেন। আর এর প্রতিদান হিসেবে তাঁর জন্যই আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩)

প্রিয়নবী (স.) বলেন, তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ তাওয়াক্কুল (ভরসা) করো তাহলে তিনি তোমাদের এমনভাবে রিজিক দেবেন যেমন তিনি রিজিক দেন পাখিদের। তারা সকালে খালি পেটে বের হয় আর সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (তিরমিজি: ২৩৪৪)

৩) ইস্তেগফার: ইস্তেগফার বা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি বিশেষ ইবাদত। এটি এমন ইবাদত, যার মাধ্যমে একাধারে গুনাহ মাফ হয়, বৃষ্টি বর্ষিত হয়, সম্পদ ও সন্তানের মাধ্যমে আল্লাহ উপকার করান, সর্বোপরি চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিকারী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ হয়। অর্থাৎ সকল সংকটের সমাধান হলো ইস্তেগফার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য বৃষ্টিবর্ষণ করবেন, তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদীনালা।’ (সুরা নুহ: ১০-১২)

৪) অপচয় ও অপব্যয় রোধ: বৈধ কাজে অতিরিক্ত ব্যয় করা হলো ইসরাফ বা অপচয়। আর অবৈধ কাজে ব্যয় করা হলো তাবজির বা অপব্যয়। দুটোই ইসলামে দোষণীয়। প্রথমটির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘এবং আহার করবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১)


বিজ্ঞাপন


দ্বিতীয়টির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর কিছুতেই অপব্যয় করবে না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা ইসরা: ২৬-২৭)

৫) আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা: আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্যতার প্রয়োজনীয়তা সাধারণত জানা-শোনার বিষয় হলেও অনেকের মধ্যে গুণটি থাকে না। ফলে তারা দ্রুত ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে যান। অথচ আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকলে অভাব আসে না। প্রিয়নবীও (স.) 
সে বিষয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে সে কখনো অভাবগ্রস্ত হয় না।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪২৬৯)

৬) জাকাতব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো, তোমরা নিজের জন্য পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা দেখেন।’ (সুরা বাকারা: ১১০)

৭) দুর্নীতি দমন: অন্যায়ভাবে পরের সম্পদ গ্রাস করা ও ন্যায্য অধিকার প্রদান না করা, ঋণ পরিশোধ না করা,  চুরি-সন্ত্রাসী করা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথার্থ ব্যবহার না করা বা গ্রাস করা ইত্যাদি বিষয় কঠোরভাবে তদারকি করা গেলে কোনো ধরনের সংকট থাকার কথা নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ (সুরা নিসা: ২৯)

৮) দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ: সময় এক রকম যায় না। কখনো অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি বা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে মানুষ। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাদ্যশস্য বা ধন-সম্পদের কিছুটা রিজার্ভ বা সংরক্ষণ দরকার। ইউসুফ (আ.) মিসরের খাদ্য-ভাণ্ডারের দায়িত্ব নিয়ে এমনটাই করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘ইউসুফ বলল, তোমরা সাত বছর একাদিক্রমে চাষাবাদ করবে, অতঃপর তোমরা যে শস্য কাটবে তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে, তা ছাড়া সব শীষ-সমেত সংরক্ষণ করবে। এরপর সাতটি কঠিন বছর আসবে, এই সাত বছর, যা পূর্বে সঞ্চয় করে রাখবে লোকে তা খাবে; শুধু সামান্য কিছু যা তোমরা (বীজ হিসেবে) সংরক্ষণ করবে, তা ছাড়া।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লিখিত বিষয়াবলী বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। সব সংকট দূর করে সমৃদ্ধ জীবন দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর