রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যেভাবে কাটাবেন মহররম মাস

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২২, ০৫:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

যেভাবে কাটাবেন মহররম মাস

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এই মর্যাদাপূর্ণ মাসের কিছু আমল রয়েছে। এই মাসের বিশেষ আমল হলো রোজা। এছাড়াও জিকির-আজকার, নফল নামাজ, দান-সদকা, পরিবার পরিজনের জন্য একটু ভালো খানাপিনার ব্যবস্থা ইত্যাদিতে ফজিলত রয়েছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যদিও মুমিন জীবনে প্রত্যেকটা দিনের কদর আছে। মুমিনের চিন্তা থাকবে, আমার আজকের দিন গতকাল থেকে কীভাবে আরও বেশি ফলপ্রসূ হয়, সর্বদা সে ফিকির করা। এ জন্য রাসুল (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষ প্রত্যুষে উপনীত হয়। এরপর নিজেকে বিক্রি করে; হয়তো সে লাভবান হয় অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৯০৮)

তবে মনে রাখতে হবে, মহররম মাস সম্মানিত চার মাসের একটি। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘আসমান-জমিন সৃষ্টিলগ্ন থেকে সময় তার মতো করে চলছে। বছর ১২ মাসে, তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। তিনটি ধারাবাহিক—জুলকাদা, জিলহজ ও মহররম। চতুর্থটি হলো রজব।’ (সহিহ বুখারি: ৩১৯৭)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: বড় ১০ ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা

ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই চার মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম ছিল। কারণ, সম্মানিত মাসে রক্তপাত খারাপ দেখায়। যদিও পরে এ হুকুম রহিত হয়ে যায়। অর্থাৎ, মাস চারটি সম্মানিত বটে, তবে সে সময়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে সমস্যা নেই। অনেক আলেমের মতে, সম্মানিত চার মাসের মধ্যে মহররম শ্রেষ্ঠ। এ প্রসঙ্গে আবু জার (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করি, ‘আল্লাহর রাসুল, কোন বাহন ভালো? রাতের কোন অংশ ও কোন মাস সর্বোত্তম?’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে বাহনের দাম বেশি, সেটি বেশি কল্যাণকর; আর রাতের সর্বোত্তম অংশ হলো মধ্যভাগ; সর্বোত্তম মাস আল্লাহর মাস, যাকে তোমরা মহররম বলে ডাকো।’ (আস-সুনানুল কুবরা: ৪২১৬)

এখানে অনেকের মনে হতে পারে, মহররম কি রমজানের চেয়েও শ্রেষ্ঠ? কারণ, এ হাদিসে রাসুল (স.) ব্যাপকভাবে মহররমকে অন্যান্য মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলেছেন। না, বিষয়টি এমন নয়; বরং এখানে শ্রেষ্ঠ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, রমজানের পরে শ্রেষ্ঠ মাস। ওয়াহাব ইবনু জারির কুররা ইবনু খালিদের সূত্রে হাসান বসরি থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বছর শুরু করেন সম্মানিত মাস দ্বারা; বছর শেষ করেন সম্মানিত মাস দ্বারা। রমজানের পর মহররমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো মাস নেই। (লাতায়িফুল মাআরিফ: ৪৭)

সম্মানিত মাস মহররমের কিছু আমল
মহররমে রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুল (স.) বলেন, রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা মহররমের রোজা; আর ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত। (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩) 


বিজ্ঞাপন


হজরত আলিকে (রা.) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে যে, ‘রমজানের পরে আমি কোন মাসে রোজা রাখব?’ তিনি বলেন, আমি রাসুলের কাছে বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করে, ‘আল্লাহর রাসুল, রমজানের পর কোন মাসে আপনি আমাকে রোজা রাখার নির্দেশ দেবেন? রাসুল (স.) বলেন, ‘যদি তুমি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররম মাসে রোজা রাখো। কারণ, মহররম আল্লাহর মাস।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮০২৬)

আরও পড়ুন: আশুরায় মাতম নিয়ে মনীষীদের অভিমত

ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, এ মাসের বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে ইবাদত করলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তাওফিক লাভ করা যায়। (আহকামুল কোরআন)

এছাড়াও আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে (মহররমের ১০ তারিখ) আপন পরিবার-পরিজনের মধ্যে পর্যাপ্ত খানাপিনার ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সারা বছর পর্যাপ্ত রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (তাবরানি: ৯৩০৩)

বেশ কয়েকজন সাহাবি থেকে এ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটির ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য আছে। ইমাম সুয়ুতিসহ অনেক বড় ইমামের মতানুসারে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য। (জামেউস সাগির: ১০১৯)

সুতরাং মহররম মাসের ফজিলত বিবেচনা করে এই মাসে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা, দরুদ পাঠ ইত্যাদি বেশি বেশি করা উচিত। কিন্তু মহররম মাসকে কেন্দ্র করে তাজিয়া মিছিল বের করা, কান্নাকাটি করা, মাতম-মর্সিয়া করা, শরীরের রক্ত বের করা, আতশবাজি ইত্যাদি ইসলামসম্মত নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসকে সুন্নাহ সমর্থিত ইবাদত বন্দেগিতে কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর