রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

চোগলখুরির পরিণাম ভয়াবহ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২২, ০৬:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

চোগলখুরির পরিণাম ভয়াবহ

সমাজের সবচেয়ে মন্দলোক হচ্ছে চোগলখোর। মানুষে মানুষে ফাটল ধরানো ও বিরোধ সৃষ্টি করাই তার কাজ। কেয়ামতের দিন তার জিহ্বা হবে আগুনের। চোগলখুরি কবর আজাবের অন্যতম কারণ। নিচে চোগলখুরি ও এর পরিণাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের দোষ অন্যজনের কানে পৌঁছে দেওয়াকে চোগলখুরি বলা হয়। চোগলখোরের লক্ষ্য থাকে দুই ব্যক্তির মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দেওয়া। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা জানো চোগলখুরি কী? সাহাবিরা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। রাসুল (স.) বলেন, চোগলখোরি হলো- বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অন্যের কাছে লাগানো।’ (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ: ৮৪৫)


বিজ্ঞাপন


ইসলামি শরিয়তে চোগলখুরি হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ। এমন গর্হিত কাজে যারা লিপ্ত, তারা চতুরতার আড়ালে নিজেদের প্রকৃত রূপটা লুকিয়ে রাখে। কিন্তু আল্লাহ বলেন, ‘এরা লোকদের কাছ থেকে নিজেদের কর্মকাণ্ড আড়াল রাখতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে গোপন করতে পারে না’ (সুরা নিসা: ১০৮)

রাসুল (স.) বলেছেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি: ৫৭০৯; মুসলিম: ১০৫)

চোগলখুরির একটি অতিনিকৃষ্ট কাজ হলো- স্বামীকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে এবং স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা, যাতে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। এই কাজটিতে শয়তান খুব খুশি হয়। অনুরূপভাবে অফিসের এক কর্মজীবী অন্য কর্মজীবীর বিরুদ্ধে বস কিংবা দায়িত্বশীলকে কথা লাগানো। উদ্দেশ্য ওই কর্মজীবীর ক্ষতি সাধন করা এবং নিজেকে দায়িত্বশীলের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তুলে ধরা। এমন কাজ হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দাদের কর্ম (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তখন সব মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, শুধু ওই ব্যক্তি ছাড়া, যার ও তার অন্য ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা আছে। এদের বিষয়ে বলা হয়, এদের বিষয় স্থগিত রাখো, যতক্ষণ না এরা ফিরে আসে। (মুসলিম: ২৫৬৫)

চোগলখুরি গিবতের চেয়েও জঘন্য। কারণ, চোগলখুরির উদ্দেশ্যই হচ্ছে বিরোধ তৈরি করা। আর গিবতকারীর মধ্যে তা থাকা জরুরি নয়। অন্যের দোষ, যা বাস্তবেই তার ভেতর আছে, তা বলাও গিবত। কিন্তু চোগলখুরি অন্যের নামে মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমেও হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


চোগলখুরি কবরের আজাবের অন্যতম কারণ। একবার রাসুল (স.) কোথাও যাচ্ছিলেন। দুটি নতুন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দাঁড়িয়ে দোয়া করেন। এরপর খেজুরের একটি ডাল দুই টুকরা করে কবর দুটিতে পুঁতে দেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রাসুল (স.) বলেন, কবর দুটিতে শাস্তি হচ্ছে। কিন্তু এমন কোনো গুনাহর কারণে শাস্তি হচ্ছে না, যা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। সহজেই তারা ওই সব থেকে বাঁচতে পারত; কিন্তু বেঁচে থাকেনি। একজন প্রস্রাবের ফোঁটা থেকে বেঁচে থাকত না, অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত।’ (বুখারি: ৫৭২৮)

চোগলখোরের আরও শাস্তির কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (স.)-কে স্বপ্নে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসে চোগলখোরের শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে আছে, রাসুল (স.)-কে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি, যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে তার মুখের এক ভাগ মাথার পেছন দিক পর্যন্ত, এভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পেছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল সে ওই ব্যক্তি, যে সকালে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে, যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। (বুখারি: ৭০৪৭)

কেয়ামতের দিন চোগলখোরের জিহ্বা হবে আগুনের। এ সম্পর্কে আম্মার (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী, কেয়ামতের দিন তার আগুনের দুটি জিহ্বা হবে’। (আবু দাউদ: ৪৮৭৩ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়; আল-আদাবুল মুফরাদ: ১৩১০; সিলসিলা সহিহা: ৮৮৯, মেশকাত: ৪৮৪৬)

 অপর হাদিসে এসেছে, আসমা বিনতু ইয়াজিদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের মধ্যকার সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তারা ওই সকল লোক যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তিনি আরও বললেন, ‘আমি কি তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্টতম লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, যারা চোগলখুরি করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং পুণ্যবান লোকদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায়।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩২৩)

এদের ব্যাপারে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তার অনুসরণ করো না, যে কথায় কথায় কসম করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অন্যকে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা কলম: ১০-১১)

সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক কল্যাণ ও অকল্যাণের কথা বিবেচনায় রেখে চোগলখুরির পথ পরিহার করা উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর