ইসলামের পরিভাষায় দীনের মধ্যে এমন কিছু সৃষ্টি করাকে বিদআত বা নব উদ্ভাবন বলা হয়, যা রাসুলুল্লাহ (স.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না; বরং পরে উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিদআত প্রথমত দুই প্রকার। ১) পার্থিব বিষয়ে বিদআত এবং (২) দীনের বিষয়ে বিদআত। পার্থিব বিষয়ে বিদআতের মূলনীতি হলো- তা বৈধ। আর দীনের ক্ষেত্রে সকল বিদআতই হারাম ও গোমরাহি।
এই বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (স.) কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। (দীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)
বিজ্ঞাপন
মহানবী (স.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭)
আলবানি (রহ.) বলেন, ‘ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতির মধ্যে হাদিসটি একটি উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন মূলনীতি এবং তা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অধিক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্যের (জামিউল কালিম) সাক্ষ্য বহন করে। কেননা হাদিসটি বিদআত ও নবপ্রবর্তিত বিষয়াদি বাতিল ও প্রত্যাখ্যান করার সুস্পষ্ট দলিল।’ (আদদিবাজু আলাল মুসলিম: ৪/৩২১)
তবে, তিন পর্যায়ের ভালো কাজ সুন্নাহ পরিপন্থী নয়। যেমন: ক) শরিয়তসম্মত কোনো ভালো কাজ অনেকের মধ্যে সর্বপ্রথম করা। খ) কোনো সুন্নত কাজ, যা উঠে গিয়েছিল, তা লোকমাঝে প্রচলিত করা অথবা জানিয়ে তার প্রচলন করা। গ) এমন কাজ, যা শরিয়তসম্মত ভালো কাজের মাধ্যম। যেমন দীনি মাদ্রাসা নির্মাণ, দীনি বই-পত্র ছাপানো ইত্যাদি। (ইবনে উসাইমিন)
দীনের মধ্যে কিছু নতুনভাবে শুরু করার মাধ্যমে মূলত শরিয়তকে অপূর্ণ আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা দীন পরিপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পরিপূর্ণ করে দিলাম..।’ (সুরা মায়েদা: ৮৯)
ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এ উম্মতের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো আল্লাহ তাদের দীন পরিপূর্ণ করেছেন। সুতরাং তারা দীনের ব্যাপারে অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী নয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৩/৩৪)
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, হে লোক সকল! জান্নাতের নিকটবর্তীকারী এবং জাহান্নাম থেকে দূরকারী এমন কোনো জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে আদেশ করিনি। আর জাহান্নামের নিকটবর্তীকারী এবং জান্নাত থেকে দূরকারী এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে নিষেধ করিনি। (বায়হাকির শুআবুল ঈমান: ১০৩৭৬; হাকেম: ২১৩৬, সিলসিলাহ সহিহাহ: ২৮৬৬)
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি যদি কিছু রচনা করে আমার নামে চালাতে চেষ্টা করতে, তবে আমি তাঁকে কঠোর হস্তে দমন করতাম এবং তাঁর কণ্ঠশিরা কেটে দিতাম। তোমাদের কেউই তাঁকে রক্ষা করতে পারত না। (সুরা হাক্কাহ: ৪৪-৪৯)
যেখানে নবীজির ব্যাপারে মহান আল্লাহর এমন কথা, সেখানে বিদআতে জড়িতদের শাস্তি কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘বিদআতের কারণে জাহান্নাম অবধারিত। কারণ রাসুল (স.) বলেছেন, ‘..প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)
হাদিসে এসেছে, বিদআতে জড়িত ব্যক্তি কেয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবেন। কিয়ামতের দিন রাসুল (স.) বিদআতি লোকদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। তিনি তাদের বলবেন, ‘যারা আমার দীনের পরিবর্তন করেছ, তারা দূর হও, দূর হও।’ (বুখারি: ৬৬৪৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করা থেকে দূরে রাখুন এবং বিদআত থেকে দূরে থাকার ও সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।