শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সন্তান লাভের দোয়া ও আমল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২২, ০৩:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

সন্তান লাভের দোয়া ও আমল

যেকোনো সমস্যায় আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার বিকল্প নেই। অসুস্থতায়ও চিকিৎসার পাশাপাশি মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হয়। কারণ, সুস্থতা দান করার মালিক আল্লাহ। মহান আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া মানুষ কিছুই অর্জন করতে পারে না। আর সন্তান-সন্ততি দানের মালিকও কেবল আল্লাহ। 

এমনকি আল্লাহ যাকে সন্তান দান করেন— কোনো অসুস্থতা কিংবা কোনো সমস্যাই তার জন্য বাঁধা হয়ে দাড়ায় না। আর তিনি না চাইলে কোনোভাবেই সন্তান লাভ করা যায় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-মেয়ে উভয়ই দান করেন। আবার যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা করেন।’ (সুরা আশ-শুরা: ৫০)

সুতরাং সন্তান চাইতে হবে কেবল আল্লাহর কাছেই। আপনি একনিষ্ঠ মনে তাঁরই কাছে নেক সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে দোয়া করুন। তিনিই আপনার ডাকে সাড়া দেবেন।

হজরত জাকারিয়া (আ.) বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নিঃসন্তান ছিলেন। মরিয়ম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একদিন তিনি দেখলেন, আল্লাহ তাআলা মৌসুম ছাড়াই মরিয়ম (আ.)-কে ফল দান করেছেন। তখন তার মনে সন্তান লাভের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল। তিনি ভাবলেন যে, যে আল্লাহ বিনা-মৌসুমে ফল দিতে পারেন, সে আল্লাহ বৃদ্ধ দম্পতিকে সন্তান দান করতে পারেন। তাই তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, যে দোয়াটি সবাই করতে পারেন। দোয়াটি হলো—

رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিঃসন্তান মাতা-পিতাকে নিচের দোয়াটিও শিখিয়েছেন— 


বিজ্ঞাপন


رَبِّ لَا تَذَرْنِى فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْوَٰرِثِينَ ‘রব্বি লা-তাযারনি ফারদাঁও ওয়া আন্তা খাইরুল ওয়ারিছিন’ অর্থ: ‘হে আমার রব, আমাকে একা রেখো না। তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৯)। অতএব, আপনিও দোয়াটি করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করবেন।

সন্তান লাভে ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়াটিও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয়। আল্লাহ তাআলার কাছে তিনি দোয়া করেছিলেন সৎ পুত্র সন্তানের জন্য। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। এতে শিক্ষা রয়েছে সন্তান কামনা করতে কীভাবে দোয়া করতে হয়।

দোয়াটি হলো— رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সলেহিন’ অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন।’ (সুরা সাফফাত: ১০০)

এছাড়াও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্যতম একটি গুণ হলো- তাঁরা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। কোরআনে বর্ণিত নিচের দোয়াটিও করতে পারেন। ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সন্তান দিয়ে সুখী করবেন। দোয়াটি হলো—

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا ‘রাব্বানা-হাবলানা-মিন্ আয্ওয়াজ্বিনা ওয়া যুররিয়্যা-তিনা-কুররাতা আ’ইয়ুন, ওয়া জা’আলনা-লিল মুত্তাকিনা ইমামা।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে আল্লাহভীরুদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন।’ (সুরা ফুরকান: ৭৪)

ইস্তেগফার করলে সন্তান ও প্রাচুর্য লাভ হয়। নুহ (আ.)- এর ব্যাপারে আল্লাহর বাণী দেখুন। ইস্তেগফারের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।(সুরা নুহ: ১২)

এছাড়াও হুদ (আ.)-এর ঘটনায় মহান আল্লাহর বাণী দেখুন। অধিক ইস্তেফারের ফলাফল বলতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা হুদ: ৫২)

নিয়মিত ইস্তেগফারে অকল্পনীয় সাহায্য পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবু দাউদ: ১৫২০)

সুতরাং আপনিও বেশি করে ইস্তেগফার করুন। ইনশাআল্লাহ আপনার সন্তান না হওয়ার দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম সন্তান দান করবেন।

সহবাসের সময় দোয়া পড়াও সন্তান লাভের একটি সুন্দর আমল। আল্লাহ চাইলে— সহবাসের সময় দোয়া করার কারণে আপনার মনোবাসনা পূরণ হতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনে যদি তাদের কিসমতে কোনো সন্তান আসে, সে সন্তানকে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৬৩৮৮)

দোয়াটি হলো- بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার নামে শুরু করছি, আপনি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখুন। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখুন।’

মনে রাখতে হবে, আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সন্তান কামনা করা যাবে না। সন্তান লাভের জন্য অবৈধ ও অনৈসলামিক উপায়ও অবলম্বন করা যাবে না। নিঃসন্তান দম্পতির উচিত— আল্লাহর ওপর ভরসা করে উল্লিখিত দোয়াগুলোর ওপর আমল করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নিঃসন্তান দম্পতির মনের আশা পূরণ করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর