সুরা ইখলাস পবিত্র কোরআনের ১১২ নম্বর সুরা। আয়াতসংখ্যা মাত্র চার। ১৫ অক্ষরের এই ছোট্ট সুরার মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর সংজ্ঞা ও পবিত্র সত্তার ব্যাখ্যা। ইখলাস অর্থ গভীর অনুরাগ, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস, খাঁটি আনুগত্য। শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তাওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে ইখলাস বলা হয়। মুশরিকরা হজরত মুহাম্মদ (স.)–কে আল্লাহর বংশপরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, যার জবাবে এই সুরা নাজিল হয়।
সুরা ইখলাসের ফজিলত এত বেশি যে, “জনৈক সাহাবি মহানবী (স.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (স.)! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ (স.) তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (সহিহ বুখারি: ৭৭৪, তিরমিজি: ২৯০১, মুসনাদে আহমদ ৩/১৪১)
আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনায়, এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (স.) এক ব্যক্তিকে আমির বা নেতা নিযুক্ত করে দেন, তিনি নামাজে ইমামতিকালে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা শেষে প্রতি রাকাতেই সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে লোকেরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন, নেতা উত্তর দেন যে, এই সুরায় আল্লাহর পরিচয় পাই, তাই এই সুরাকে ভালোবাসি। এ কথা শুনে রাসুল (স.) বললেন, তাহলে আল্লাহও তোমাকে ভালোবাসেন। (সহিহ বুখারি: ৭৩৭৫, মুসলিম হাদিস:৮১৩, নাসায়ি: ২/১৭০)
কোরআন থেকে আমরা মূলত তিনটি মৌলিক জিনিস শিখি—তাওহিদ, আখিরাত ও রিসালাত। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের বিশ্বাস, আল্লাহর প্রেরিত অহির প্রতি বিশ্বাস। এভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, এর এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আর মহান ও পবিত্র সত্তাকে চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সুরা ইখলাসে।
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (স.) বলেছেন, আল্লাহ কোরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। আর এ সুরাটি (সুরা ইখলাস)-কে একটি ভাগে পরিণত করেছেন। (মুসলিম: ৮১২, তিরমিজি: ২৯০০)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা ইখলাস পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে মহানবী (স.)-কে বিষয়টি অবহিত করা হলো। মহানবী (স.) তখন বলেন, ওই সত্তার শপথ, যার কুদরতের হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সুরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি: ৫০১৩, আবু দাউদ: ১৪৬১, নাসায়ি: ২/১৭১, মুআত্তা মালেক: ১/২০৮)
বিজ্ঞাপন
অন্য বর্ণনায় আছে, মহানবী (স.) একদা সাহাবিদের বলেন, তোমারা কি এক রাতে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বললেন, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? মহানবী (স.) তখন বললেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি: ৫০১৫, নাসায়ি: ৯৯৫)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ ইমানের সঙ্গে করতে পারবে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। (১) যে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে। (২) যে ব্যক্তি গোপন ঋণ পরিশোধ করবে। (৩) এবং যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে (তাফসিরে কাসির)।
অন্য বর্ণনায় আছে—
‘যে ব্যক্তি ‘ক্বুল হুআল্লা-হু আহাদ’ শেষ পর্যন্ত ১০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে এক মহল (ঘর) নির্মাণ করবেন। এ কথা শুনে ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি করে পড়বো হে আল্লাহর রাসূল! রাসুল (স.) বললেন, আল্লাহও বেশি দানশীল ও বেশি পবিত্র।’(মুসনাদে আহমদ: ১৫৬১০)
সুরা ইখলাস
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - اللَّهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ: কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সমাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।
অর্থ: (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সুরা ইখলাস পড়ার তাওফিক দিন। একইসঙ্গে সুরার তাৎপর্য বোঝার ও সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।