কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের শিক্ষা এবং আল্লাহর ভালোবাসায় নিজের সব চাহিদা ত্যাগ করার শিক্ষা রয়েছে।
কোরবানির পশুর গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারকে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া দেবে এবং গরিব-মিসকিনকে সদকা করবে। গোশত বিতরণের মোস্তাহাব পদ্ধতি হলো তিন ভাগ করে এক ভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখবে এবং বাকি দুই ভাগের এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে আর এক ভাগ গরিব-মিসকিনকে বণ্টন করে দেবে। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৪৭৩)
বিজ্ঞাপন
কোরবানির গোশত মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করা উত্তম। তবে অমুসলিম প্রতিবেশী দুস্থ-অভাবীদের কিছু দেওয়ায় দোষ নেই (ফতোয়ায়ে লাজনা দায়েমাহ: ১১/৪২৪)। কেননা এটি জাকাত বহির্ভূত নফল সদকার অন্তর্ভুক্ত। (আল-মুগনি: ৩/৫৮৩, ৯/৪৫০)
‘কোরবানির গোশত অমুসলিমকে দেওয়া বৈধ, মজুরি বাবদ দেওয়া জায়েজ নেই। অবশ্য মুসলিমদের দেওয়াই উত্তম। কসাইকে গোশত বানানোর মজুরি হিসেবে গোশত, চামড়া, রশি ইত্যাদি দেওয়া বৈধ নয়। পারিশ্রমিক দিতে হলে তা ভিন্নভাবে আদায় করবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩০)
ইসলামের প্রধান লক্ষ্য মানবতার কল্যাণ। অমুসলিমকে দান করা সব আলেমের ঐকমত্যে বৈধ। অমুসলিম প্রতিবেশী আক্রান্ত হলে, তারা বিপদগ্রস্ত হলে মুসলমানদের উচিত তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) তাঁর ইহুদি প্রতিবেশীকে দিয়েই গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন (বুখারি, তিরমিজি: ১৯৪৩; আল-আদাবুল মুফরাদ: ১২৮, সনদ সহিহ)। ‘তোমরা মুসলমানদের কোরবানি থেকে মুশরিকদের আহার করাবে না’ মর্মে যে হাদিস এসেছে তা ‘জইফ’ বা দুর্বল। (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান: ৯১১৩)
তবে ইসলামি রাষ্ট্রের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি জাকাত অমুসলিমদের দেওয়া যাবে না। কেবল জাকাতের ক্ষেত্রে বিধানের স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখা হয়েছে। রাসুল (স.) মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-কে ইয়ামেনে পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তুমি তাদেরকে এই মর্মে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের ওপরে সদকা ফরজ করেছেন। যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে নেওয়া হবে ও তাদের গরিবদের মধ্যে দেওয়া হবে (মুসলিম: ১৯; মেশকাত: ১৭৭২)।
এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ) বলেন, এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, কাফেরকে জাকাতের মাল দেওয়া যাবে না (নববি, শরহ মুসলিম: ১৯-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরবানির মাসায়েলসহ দীনের সকল বিধি-বিধান যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

