মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সঠিক পথ পেতে ও টিকে থাকতে নবীজির শেখানো দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

সঠিক পথ পেতে ও টিকে থাকতে নবীজির শেখানো দোয়া

ইসলামে দোয়াকে ‘ইবাদতের মূলস্তম্ভ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে এটি শুধুই প্রার্থনা নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার নিবিড় যোগসূত্র স্থাপনেরও মাধ্যম। জীবনের পথচলায় আমরা সবাই কখনো না কখনো পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ি কিংবা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হই। ইসলামের শিক্ষা হলো- এমন প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। নবীজি (স.) নিজে নিয়মিত যে দোয়াগুলো পড়তেন, সেগুলোর মাধ্যমেই আমরা পেতে পারি সঠিক পথের সন্ধান এবং সেই পথে অবিচল থাকার শক্তি। এখানে আমরা এমনই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া নিয়ে আলোচনা করব, যা সরল পথের দিশা এবং সেই পথে অবিচল থাকার শক্তি প্রার্থনা করে।

প্রথম দোয়া

আরবি: اللَّهُمَّ اهْدِنِي وَسَدِّدْنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহ-দিনী ওয়া সাদ্দিদনী। 
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে সত্য পথে পরিচালিত করুন এবং আমাকে সেই পথে অবিচল ও ত্রুটিমুক্ত রাখুন।’ (মুসলিম, মেশকাত: ২৪৮৫)

গভীরার্থ বিশ্লেষণ: এই সংক্ষিপ্ত দোয়াটি দুটি মৌলিক প্রার্থনা একত্রিত করেছে। ‘আহদিনী’ শব্দটি কেবল পথ দেখানোকে নির্দেশ করে না, বরং এটি ঈমানের দৃঢ়তা, সঠিক জ্ঞানার্জন ও আমলে সালেহ করার সামর্থ্য চায়। দ্বিতীয় অংশ ‘সাদ্দিদনী’ আরও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি এমন এক ধরনের স্থিরতা, ভারসাম্য ও সূক্ষ্ম নির্ভুলতা কামনা করে, যা একজন দক্ষ তীরন্দাজের লক্ষ্যভেদের নিখুঁততার মতো। অর্থাৎ, শুধু পথ পাওয়া নয়, সেই পথে পরিপূর্ণ দক্ষতা ও অবিচলতা নিয়ে চলার শক্তি চাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া

দ্বিতীয় দোয়া

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالسَّدَادَ 
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকাল হুদা ওয়াস-সাদাদ। 
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়াত ও (সেই পথে) অবিচলতা প্রার্থনা করছি।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৮০৫)

প্রার্থনার দ্বৈত স্তর: এই দোয়ায় ‘আল-হুদা’ ও ‘আস-সাদাদ’ পরিষ্কারভাবে পৃথক শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ইঙ্গিত করে যে, প্রথমে পথনির্দেশনা (হেদায়াত) এবং তারপর সেই পথে চলার অটুট দৃঢ়তা (সাদাদ) দুই-ই পৃথক অনুগ্রহ, যার জন্য আলাদাভাবে প্রার্থনা করতে হবে।

হাদিসে নবীজির নির্দেশনা

এ দোয়াগুলোর গুরুত্ব ও ফজিলত সরাসরি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে বললেন- ‘তুমি বলো- ‘হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দাও এবং সেই পথে আমাকে স্থির ও নির্ভুল রাখো।’ (মেশকাত: ২৪৮৫)

এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেয় যে, এটি নবীজির শিক্ষা ও সুন্নতের অংশ। তিনি শুধু দোয়াটি পড়তেন না, বরং সাহাবায়ে কেরামকেও এটি শিখিয়েছেন এবং নিয়মিত পড়ার তাগিদ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ৭ বার যে দোয়া পড়তে বলেছেন নবীজি

জীবনে প্রয়োগ: কখন ও কীভাবে পড়বেন

১. প্রতিদিনের সকাল-সন্ধ্যা: ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর নিয়মিত পড়া।
২. সিদ্ধান্তের মুহূর্তে: জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে (যেমন: চাকরি, বিয়ে, ব্যবসা)।
৩. কঠিন পরিস্থিতিতে: যখন পথভ্রষ্টতা বা বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে।
৪. ইবাদতের সময়: নামাজের কুনুত দোয়ায় বা সেজদার সময় অন্তরে জাগ্রত করা।

ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের দিকনির্দেশনা

এই দোয়াগুলো মুমিনের জন্য শুধু প্রার্থনার শব্দ নয়, বরং এক জীবনদর্শন। এগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সঠিক পথ পাওয়া এবং সেই পথে টিকে থাকা- দুটোই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের ফল। আধুনিক জীবনের জটিলতা, চাপ ও নৈতিক দ্বিধার মাঝে এই দোয়া হৃদয়ে ধারণ করলে একজন মুমিন আধ্যাত্মিক, মানসিক ও বাস্তব জীবনে এক অনন্য ভারসাম্য ও দৃঢ়তা খুঁজে পায়।

নবীজির সুন্নত হিসেবে নিয়মিত এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য লাভের পাশাপাশি, একটি স্থিতিশীল ও সফল জীবন গঠনের দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর