শীতকাল দিন ছোট ও আবহাওয়া স্বাচ্ছন্দ্যময় হওয়ায় নফল রোজা পালনের জন্য এক অপূর্ব সময়। এ সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘আইয়ামে বিজ’ তথা প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের নফল রোজা। এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিয়মিত সুন্নত আমলগুলোর অন্যতম, যার ফজিলত হাদিসে ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৫ ও জানুয়ারি ২০২৬-এ এই রোজা রাখার সম্ভাব্য তারিখ ও সংশ্লিষ্ট ফজিলত জেনে রাখুন।
ডিসেম্বর ২০২৫-এর আইয়ামে বিজ
- ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ (বৃহস্পতিবার)
- ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ (শুক্রবার)
- ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ (শনিবার)
আরও পড়ুন: যেসব দিনে নফল রোজা রাখতেন নবীজি
জানুয়ারি ২০২৬-এর আইয়ামে বিজ (সম্ভাব্য)
- ১৩ রজব ১৪৪৭ হিজরি: ০২ জানুয়ারি ২০২৬ (শুক্রবার)
- ১৪ রজব ১৪৪৭ হিজরি: ০৩ জানুয়ারি ২০২৬ (শনিবার)
- ১৫ রজব ১৪৪৭ হিজরি: ০৪ জানুয়ারি ২০২৬ (রবিবার)
দ্রষ্টব্য: রজব মাসের আইয়ামে বিজ চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার ভিত্তিতে তারিখ একদিন আগে বা পরে হতে পারে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঘোষণা চূড়ান্ত হিসেবে মান্য করুন।
আরও পড়ুন: নফল রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব
আইয়ামে বিজ কী ও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
‘আইয়ামে বিজ’ অর্থ ‘উজ্জ্বল বা সাদা দিন’। চান্দ্রমাসের এই দিনগুলোর রাতে চাঁদের আলো প্রখর থাকে বলে এ নাম। এই রোজার বিশেষ ফজিলত হাদিসে এসেছে।
১. হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে বলেন- ‘যদি তুমি প্রতি মাসে রোজা রাখতে চাও, তাহলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখ।’ (সুনানে তিরমিজি: ৭৬১)
২. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু (রাসুলুল্লাহ স.) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়ত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। ১. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা, ২. দোহার নামাজ এবং ৩. বিতির (সালাত) আদায় করে শয়ন করা।’ (সহিহ বুখারি: ১১৭৮)
৩. অন্য হাদিসে এসেছে: ‘এই রোজা পালন করলে সারাবছরের নফল রোজার সমতুল্য সওয়াব অর্জন হয়।’ (আবু দাউদ: ২৪৪৯)
আরও পড়ুন: সোম-বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত
শীতে আইয়ামে বিজ রাখার বাড়তি সুবিধা
- দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা সহজ।
- শীতল আবহাওয়ায় পানির চাহিদা কম, ক্লান্তি কম অনুভূত হয়।
- বছরের শেষ ও শুরুতে আত্মশুদ্ধির উত্তম সময়।
কখন কীভাবে রাখবেন
আইয়ামে বীজের রোজা প্রতি হিজরি মাসের নির্দিষ্ট তিন দিনে রাখা হয়- ১৩ তারিখ: প্রথম দিন। ১৪ তারিখ: দ্বিতীয় দিন। ১৫ তারিখ: তৃতীয় দিন।
যদি কোনো কারণে এই দিনগুলোতে রোজা রাখা সম্ভব না হয়, অন্য দিনে কাজা করা যায়। তবে হাদিসে নির্দিষ্টভাবে এই তিন দিনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (সুনান নাসায়ি: ২৪২০)
আইয়ামে বিজের রোজা একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত সওয়াবের সুন্নত। শীতের এই মৌসুমে ছোট দিনের সুযোগ নিয়ে এই আমলটি পালনের মাধ্যমে আমরা রাসুল (স.)-এর সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং আল্লাহর বিশেষ রহমতের অধিকারী হতে পারি। আসুন, আমরা ডিসেম্বর ও জানুয়ারির এই নির্ধারিত দিনগুলোতে রোজা রাখার মাধ্যমে সৌভাগ্যবানদের কাতারে শামিল হই।

