চলতি বছর হজ অনুষ্ঠিত হবে ৮ জুলাই। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর কোটা ৪ হাজার জন (রাষ্ট্রীয় খরচ ও গাইডসহ), অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কোটা ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে (২ জুলাই দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত) মোট ৫৩ হাজার ৩৬৭ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
মিকাত পার হওয়ার আগে সাদা কাপড়ে নিজেদের শরীর আবৃত করেছেন হজযাত্রীরা। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই আসুক, সবাইকে এই নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এটি ফরজ বিধান। শুভ্র কাপড়াবৃত হওয়ার এই বিধান ছাড়া হজ হয় না। নবীজি (স.) এ ধরণের কাপড় পরিধান করতেন এবং তাঁর সাহাবিরাও একই নিয়মে হজ ওমরা পালন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু কাফনের মতো কাপড়ই পরতে হয় কেন হজযাত্রীদের—এ প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। আসুন হাদিস থেকেই এর উত্তর জেনে নেই। হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, البَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمُ البَيَاضَ، فَإِنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ ‘সাদা পোশাক পরিধান করো। কেননা, তা পবিত্র ও উত্তম। তোমাদের মৃতদের তার দ্বারাই কাফন প্রদান করো।’ (নাসায়ি, আবু দাউদ: ৪০৬১; তিরমিজি: ৯৯৪)
তাই শুভ্র ইহরামের কাপড়ে সজ্জিত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বমুসলিম নবীজির সুন্নত অনুসরণ করে থাকেন। এছাড়া ইহরামে অভিন্ন পোষাক মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য, সাম্য ও সৌহার্দ্যরে ইঙ্গিত বহন করে। মহান প্রভুকে হাজিরা দেওয়ার জন্য এটি পবিত্র ও পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। গোলাম হিসেবে নিরহংকার ও আদবের প্রতীক। জীবিত থাকতেই মৃত্যুর প্রতীক।
সেলাইবিহীন শুভ্র এ পোশাক যেন হাজীকে সবক দিচ্ছে, জীবনের শেষ সফরেও এগুলোই হবে তোমার পরিধেয় বস্ত্র। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ এই তালবিয়া পাঠ কেয়ামতের দিন আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পবিত্র কাবার চারদিক তাওয়াফ আরশে আজিমের চতুর্দিকে ফেরেশতাদের প্রদক্ষিণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সাফা ও মারওয়া সায়ি করার সময় স্মরণ করিয়ে দেয় হাশরের ময়দানে এদিক ওদিক ছোটাছুটির কথা। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হাশরের ময়দানে অবস্থানে কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হজের প্রতিটি আমল দ্বারা আখেরাতের চিত্র হাজিদের সামনে ভেসে উঠে।
ইহরামের সাদা কাপড় ইঙ্গিত করে, মুসলমানদের জীবন-যাপন সাদাসিধা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নিরহংকার নির্বিলাস হওয়া উচিত। ইহরামের পোশাক পরে হাজীরা যখন ‘লাব্বাইকা, আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা’ বলে তালবিয়া পাঠ করে, তখন তাঁর ডানে ও বাঁয়ে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সব কিছুই তার সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করে; এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়’ (তিরমিজি: ৮২৮)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল হজপ্রত্যাশীদের হজ করার সামর্থ্য-সক্ষমতা দান করুন। হজের প্রথম ফরজ ইহরামের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। হজে মাবরুর নসিব করুন। আমিন।