রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইবনে আব্বাস ও আবু হুরায়রা (রা.)-এর জন্য নবীজির বরকতময় দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ইবনে আব্বাস ও আবু হুরায়রা (রা.)-এর জন্য নবীজির বরকতময় দোয়া

রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর সাহাবিদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহশীল। তাঁদের জ্ঞান, ইবাদত ও দ্বীনের কাজে অগ্রগতির জন্য তিনি আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করতেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এবং হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর জন্য তাঁর দোয়া ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর দোয়ায় একজন দ্বীনের গভীর জ্ঞান লাভ করেছেন, অন্যজন লাভ করেছেন হাদিস মুখস্থ রাখার অসাধারণ ক্ষমতা।

ইবনে আব্বাস (রা.)-এর জন্য দোয়া ও তাঁর জ্ঞানার্জন

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চাচাতো ভাই। অল্প বয়স থেকেই তিনি নবীজির সান্নিধ্য লাভ করেন। একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে জড়িযে ধরে দোয়া করলেন- اللَّهُمَّ عَلِّمْهُ الْكِتَابَ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আল্লিমহুল কিতাব। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তাঁকে কিতাব (কোরআন) শিক্ষা দিন।’ (সহিহ বুখারি: ৭৫) অন্য বর্ণনায় রয়েছে- اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِي الدِّينِ‏ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ফাক্কিহহু ফিদ্দীন। অর্থ: ‘হে আল্লাহ তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করুন।’ (সহিহ বুখারি: ১৪৩)

এই দোয়ার বরকতে ইবনে আব্বাস (রা.) ইসলামের ইতিহাসে ‘তর্জুমানুল কোরআন’ (কোরআনের ভাষ্যকার) হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। জ্ঞানার্জনে তাঁর নিষ্ঠা ছিল অসাধারণ। সাহাবিদের কাছে হাদিস ও জ্ঞান আহরণের জন্য তিনি দ্বারে দ্বারে যেতেন। অনেক সময় দরজার বাইরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতেন কেবল একটি হাদিস শেখার উদ্দেশ্যে। নবীজির দোয়া ও তাঁর অধ্যবসায়ের কারণে তিনি হয়ে ওঠেন ইসলামের জ্ঞানভাণ্ডারের শ্রেষ্ঠ রক্ষক।

আরও পড়ুন: সাহাবিদের সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেছেন

আবু হুরায়রা (রা.)-এর জন্য দোয়া ও তাঁর হাদিস সংরক্ষণের কীর্তি

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) ছিলেন হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে সর্বাধিক হাদিস সংরক্ষণকারী। তিনি নিজেই বলেন- ‘আমি বললাম- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদিস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বললেন- তোমার চাদর মেলে ধর। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দু’হাত খাবল করে তাতে কিছু ঢেলে দেয়ার মতো করে বললেন- এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। অতঃপর আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি।’ (সহিহ বুখারি: ১১৯)

এই দোয়া ও বরকতের ফলেই আবু হুরায়রা (রা.) সর্বাধিক ৫,৩৭৪টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা অন্য যেকোনো সাহাবির চেয়ে বেশি। তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ও নিষ্ঠার কারণে তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর শিক্ষার অন্যতম প্রধান বাহক হয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

আরও পড়ুন: সাহাবিরা কোরআন মুখস্থ করতেন যে নিয়মে

নবী কারিম (স.)-এর দোয়ায় ছিল অসীম বরকত ও কবুলিয়াত। তাঁর দোয়ার প্রভাবে ইবনে আব্বাস (রা.) কোরআনের গভীর ব্যাখ্যাদাতা এবং আবু হুরায়রা (রা.) হাদিসের ধারক ও বর্ণনাকারী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এ ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়- জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও স্মৃতিশক্তি অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরও উচিত নিজেদের, সন্তানদের ও ছাত্রদের জন্য আল্লাহর কাছে এ ধরনের দোয়া করা, যেন আমরা উপকারী জ্ঞান অর্জন করতে পারি এবং তা সংরক্ষণ ও প্রচারে নিয়োজিত হতে পারি।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর