ইসলামে দোয়া হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্দার যোগাযোগের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। কিছু দোয়া এতই ফজিলতপূর্ণ যে তা নিয়মিত পাঠ করলে মানুষের জীবন আমূল বদলে যেতে পারে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত এমনই একটি বিশেষ দোয়া এখানে তুলে ধরা হলো—যা আমাদের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ গুণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে শেখায়। দোয়াটি হলো-
আরবি: رَبِّ اجْعَلْنِي لَكَ شَكَّارًا لَكَ ذَكَّارًا لَكَ رَهَّابًا لَكَ مِطْوَاعًا لَكَ مُخْبِتًا إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيبًا
উচ্চারণ: রাব্বিজ'আলনি লাকা শাক্কারান, লাকা যাক্কারান, লাকা রাহ্হাবান, লাকা মিত্ওয়া'আন, লাকা মুখবিতান ইলাইকা আওওয়াহান মুনিবান।
অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে আপনার জন্য কৃতজ্ঞ বানান, আপনার জন্য অধিক জিকিরকারী বানান, আপনার জন্য ভীত বানান, আপনার জন্য অনুগত বানান, আপনার জন্য বিনীত বানান, আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ও আপনার দিকে ফিরে আসা বান্দা বানান।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৫১)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া
দোয়া উল্লেখিত ৭ গুণের ব্যাখ্যা
১. শোকরগুজার (শাক্কারান): আল্লাহর প্রতিটি নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমি তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)
২. জিকিরকারী (জাক্কারান): সর্বদা আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা জিকির করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৯১)
বিজ্ঞাপন
৩. ভীত (রাহ্হাবান): আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করা। আল্লাহ বলেন, ‘যারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা মুলক: ১২)
৪. অনুগত (মিতওয়াআন): আল্লাহর আদেশ-নিষেধ সম্পূর্ণরূপে মেনে চলা। কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর....এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।’ (সুরা নিসা: ৫৯)
৫. বিনীত (মুখবিতান): আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনীত পুরুষ ও নারী....তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা আহজাব: ৩৫)
৬. ক্ষমাপ্ৰাৰ্থী (আওওয়াহান): সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল।’ (সুরা নূহ: ১০)
৭. আল্লাহর দিকে ফিরে আসা বান্দা (মুনিবান): সব ভুল থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তার দিকে ফিরে আস; আমার রব তো পরম দয়ালু, অতি স্নেহময়। (সুরা হুদ: ৯০)
আরও পড়ুন: সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া
কখন ও কীভাবে এই দোয়া পড়বেন?
এই দোয়াটি যেকোনো সময় পড়া যায়। তবে কিছু উপযুক্ত সময়ে নিয়মিত পড়লে ভালো। যেমন-
- প্রতিদিন ফজরের ও আছরের নামাজের পর।
- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে এই দোয়া পড়া।
- নামাজের সেজদারত অবস্থায় এই দোয়া পড়া অত্যন্ত কার্যকর।
- যখন অন্তর দুর্বল মনে হয়, তখন এই দোয়া পড়া ভালো।
এই দোয়াটি একজন মুমিনের আত্মিক উন্নতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ। এটি আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ককে গভীর করে। আসুন, আমরা এই দোয়াটি মুখস্থ করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ করে নিই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই দোয়া পাঠ করার এবং এর শিক্ষাগুলো জীবনে প্রয়োগ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

