শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কোরবানির টাকা বন্যাদুর্গতদের দান করা যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২২, ০৮:৫৭ এএম

শেয়ার করুন:

কোরবানির টাকা বন্যাদুর্গতদের দান করা যাবে কি?

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার শিকার সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের অনেক জেলা। বন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। ওসব এলাকায় সুপেয় পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও দুর্গত মানুষদের প্রয়োজন চিকিৎসাসেবা, আবাস ও পরিধেয় বস্ত্র। এই অবস্থায় কোরবানির টাকা দুঃখী মানুষের মাঝে দান করে দিলে গুনাহ হবে? অথবা কোরবানির হক আদায় হবে? 

এর সহজ উত্তর হচ্ছে—কোরবানির সব টাকা বন্যাদুর্গতদের বা গরীব-অসহায়দের দান করা যাবে না। কারণ ইসলামে কোরবানি একটি স্বতন্ত্র বিধান। যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাকে কোরবানি করতেই হবে। কোরবানি করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

সুতরাং যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তিনি নির্ধারিত দিনগুলোতে পশু জবাই করলেই কেবল এই হুকুম আদায় হবে। এর পরিবর্তে দান-সদকা করে দিলে কোরবানির হক আদায় হবে না। বরং ওয়াজিব বিধান লঙ্ঘন করার কারণে গুনাহ হবে। নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তীও না হয়।’ (সহিহ ইবনে মাজাহ: ২৫৩২)

কিন্তু, যাদের সামর্থ্য বেশি, তারা বানভাসি মানুষদের সাহায্য করা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারেন না। ভাইয়ের বিপদে মানবিক আচরণ করা সকল মুমিনের পবিত্র দায়িত্ব। এটিই ইসলামের শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতসদৃশ, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলে (ফাঁকে) ঢোকালেন। (বুখারি: ৬০২৬)

তাই অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে হবে। বন্যাকবলিত বা বিপদগ্রস্তকে দয়া করা আল্লাহর ক্ষমা ও কৃপা পাওয়ার বড় মাধ্যম। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়া করে’ (বুখারি: ১৭৩২)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই, যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৪)

সুতরাং উত্তম সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কম খরচে কোরবানির হক আদায় করে বাকি টাকা বন্যার্তদের দান করে দেওয়া। মনে রাখতে হবে, যদি কেউ শতকোটি টাকার মালিকও হন, তিনি মাত্র একটি পশু কোরবানি করলেই কোরবানির হক আদায় হয়ে যায়। তাই তিনি চাইলে এই দুর্যোগে অনেক পশু কোরবানি করার পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি করবেন এবং বাকি টাকা বন্যাদুর্গতদের দান করে দিতে পারেন। 

একইভাবে যিনি দুয়েক লাখ টাকা কোরবানির জন্য বরাদ্দ করেছেন, তিনি মাত্র একটি ছাগল কোরবানি দিয়েও কোরবানির হক আদায় করতে পারেন এবং বাকি টাকা দান করতে পারেন। আবার, যারা কোরবানি ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও শুধু সওয়াবের আশায় কোরবানি করেন, তারা এই পরিস্থিতিতে পশু না কিনে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে কোনো অসুবিধা নেই।

উল্লেখ্য, কোরবানির সময়কাল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম সময়। হাদিস অনুযায়ী, কোরবানির দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমল আর নেই। আর কোরবানির পশু জবেহ করার সঙ্গে বান্দার তাকওয়া অর্জনের সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘এসব পশুর রক্ত, গোশত আল্লাহর কাছে কিছুই পৌঁছে না; বরং তোমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের তাকওয়াই তাঁর কাছে পৌঁছে’ (সুরা হজ: ৩৭)। 

অন্য আয়াতে কারিমায় এসেছে, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবই সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তার কোনো শরীক নেই।’ (সুরা আনআম: ১৬২-৬৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কোরবানি আদায়সহ বন্যার্তদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর