বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত। কোরআন ও হাদিসে বৃষ্টিকে পবিত্র ও কল্যাণময় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই বৃষ্টির পানি পান করার সময় শুকরিয়া ও বরকতের দোয়া পড়া উত্তম।
হাদিসে বৃষ্টির পানি পান করার বিশেষ কোনো দোয়ার উল্লেখ নেই। তবে সাধারণভাবে খাওয়ার সময়ের দোয়া بِسْمِ اللهِ বিসমিল্লাহ পড়া এবং পানশেষে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ আলহামদুলিল্লাহ পড়া উত্তম।
বিজ্ঞাপন
এরপরও কেউ চাইলে এভাবে দোয়া করতে পারেন- اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ رَحْمَةً وَلَا تَجْعَلْهُ عَذَابًا ‘হে আল্লাহ! এটিকে রহমত বানান, শাস্তি বানাবেন না।’ যেহেতু নবীজি রহমতের বৃষ্টি কামনা করতেন এবং বৃষ্টির ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার প্রার্থনা করতেন, তারই আদলে দোয়াটি পড়া যায়।
বৃষ্টির সময় দোয়া কবুলের ইঙ্গিত রয়েছে, তাই এসময় অন্য মাসনুন দোয়াগুলো বেশি বেশি পাঠ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয় প্রত্যাখ্যাত হয় না কিংবা কম প্রত্যাখ্যাত হয়। এক. আজানের সময়। দুই. বৃষ্টির সময়।’ (সহিহুল জামে: ৩০৭৮)
বৃষ্টির পানি পান করার ক্ষেত্রে সতর্কতা
বৃষ্টির পানি পান করার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন। যেমন-
বিজ্ঞাপন
প্রথম বৃষ্টির পানি এড়িয়ে চলা: নবীজি (স.) প্রথম বৃষ্টির পানি পান বা ব্যবহার থেকে সতর্ক করেছেন, কারণ তা আকাশের ময়লা ধুয়ে নিয়ে আসতে পারে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ২৯২৪১)
আরও পড়ুন: বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার যেসব উপকার করেন
দৃশ্যমান ময়লা থাকলে পরিহার: বৃষ্টির পানি স্বভাবতই পবিত্র (তাহুর), তবে দৃশ্যমান নাপাকি থাকলে ব্যবহার না করা। (সুনান আবু দাউদ: ৬৬) যদি পানিতে ময়লা, রাসায়নিক বা দুর্গন্ধ থাকে, বিশেষত শহরাঞ্চলে সতর্কতাস্বরূপ ফিল্টার বা ফুটিয়ে পান করা।
নবীজি (স.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের ক্ষতির কারণ বানিও না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৭৮)।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে কাজে লাগানো (যেমন ওজু, গাছের সেচ) মোস্তাহাব।
বৃষ্টি শুরু হলে নবীজি যা করতেন
দোয়া পাঠ: বৃষ্টি শুরু হলে নবীজি (স.) বলতেন- اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا ‘হে আল্লাহ কল্যাণকর বৃষ্টি দাও।’ অতিবৃষ্টি বা ক্ষতিকর বৃষ্টি হলে এই দোয়া পাঠ করতেন- اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا، وَلاَ عَلَيْنَا ‘হে আল্লাহ আমাদের আশপাশে (জনবসতির বাইরে) বৃষ্টি দাও, আমাদের উপর নয়।’ (বুখারি: ৯৬৬)
বৃষ্টি স্পর্শ: বৃষ্টি উপভোগ করা এবং বৃষ্টির পানি গায়ে লাগানো নবীজির (স.) একটি আমল। মাঝেমধ্যে রাসুল (স.) আল্লাহর রহমতের বারিধারায় নিজের পুরো শরীরও ভিজিয়ে নিতেন। (মুসলিম: ২৯৪)
বৃষ্টি শেষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসুল (স.) সাহাবায়ে কেরামকে বিশেষ একটি দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন- ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ’। অর্থ- আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। (সহিহ বুখারি: ১০৩৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বৃষ্টির পানি যথাযথ ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। বৃষ্টির সময় নবীজির সুন্নত পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

