রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হেদায়াত যেভাবে ভেঙে পড়া হৃদয়ে ধাক্কা দেয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

হেদায়াত যেভাবে ভেঙে পড়া হৃদয়ে ধাক্কা দেয়

ঢাকার এক নিঃসঙ্গ রাত। আকাশে ভারী মেঘ, হঠাৎ হালকা গুঞ্জন—বৃষ্টি আসবে বুঝি। তালহা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে। নিচের শহরের ঝলমলে আলোগুলো আজ যেন তার ব্যর্থতা নিয়ে উপহাস করছে।

চাকরি গেছে দুই সপ্তাহ আগে। বন্ধুরা ধীরে ধীরে সরে গেছে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক—বাবার শেষ মেসেজ- ‘তুই ব্যর্থ ছেলে; তোকে নিয়ে আমার গর্ব করার কিছু নেই।’


বিজ্ঞাপন


তালহার চোখে পানি জমে। ব্যথাটা গলায় আটকে যায়। সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে মায়ের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে ঢুকে। মা শেষ মেসেজ পাঠিয়েছিলেন পাঁচ দিন আগে- ‘তুই শুধু আল্লাহকে ডাকিস, বাবা। মানুষ তো ভুল করে, কিন্তু আল্লাহ তো ক্ষমাকারী।’

সে মায়ের মেসেজটা অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে দেখে... কিন্তু রিপ্লাই দেয় না।

বন্ধু সালমানকে হঠাৎ মেসেজ পাঠায়- ‘দোস্ত, আমি আর পারছি না। থেমে যেতে চাই...।’ সালমান রিপ্লাই দেয়- ‘পাগল না তুই! একটু সিজদায় পড়। আল্লাহ তো আছেন!’

তালহা ফোনটা বন্ধ করে ফেলে দেয়। হঠাৎ মাথার ওপর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে তালহার কান্না মিশে একাকার হয়ে যায়। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে- ‘আল্লাহ, তুমি কি আছো? থাকলে আমাকে একটা চিহ্ন দাও… শুধু একটা চিহ্ন!’


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: আল্লাহর ওপর যারা তাওয়াক্কুল করে তাদের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহর

সেই মুহূর্তে আল্লাহর জবাব

ভোর ৪টা। চারদিকে নিস্তব্ধতা। হঠাৎ কাছের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। ইমাম সাহেবের কণ্ঠে তেলাওয়াত-  وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩)

এই আয়াতের প্রতিটি শব্দ যেন তালহার হৃদয়ে বিদ্যুৎ হয়ে বাজে। সে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। কাঁপতে কাঁপতে বলে- ‘ইয়া রব, আমি এতদিন কাকে খুঁজছিলাম? আপনিই তো আছেন!’

নতুন জীবনের সূচনা

সেই রাতই তালহার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। জীবনে প্রথমবার ফজরের জামাতে যোগ দিল। সে প্রতিজ্ঞা করে— জীবনে নামাজ ছাড়বে না। ৪০ দিনের ইস্তেগফারের চ্যালেঞ্জ নিল। পরদি যোগ দিল একটি ইসলামিক সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।

তিন মাস পর

তালহার মুখে আলো। দাড়ি রেখেছে, মন বদলে গেছে। একটা ইসলামিক ম্যাগাজিনে লেখালেখির চাকরি পেয়েছে। হালাল রিজিকের পথ খুলে গেলো। মা ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলে- ‘তুই আমার গর্ব, বাবা।’ তালহা বলল- ‘আলহামদুলিল্লাহ মা, দোয়া করো যেন কখনও আল্লাহকে ভুলে না যাই...।’

একদিন বাবা নিজেই ম্যাগাজিনের একটা সংখ্যায় ছেলের কলাম দেখে ফোন করলেন- ‘তোর লেখা পড়ে মনে হলো, আমি তোকে বুঝিনি... মাফ করে দিস বাবা।’
তালহা (চোখ ভিজে)- ‘আপনি দোয়া করবেন, আমি যেন আল্লাহর পথেই থাকি।’

তালহার জীবনের এই পরিবর্তন প্রমাণ করে— 
১. যখন সব দরজা বন্ধ মনে হয়, তখনই আল্লাহ নতুন পথ খুলে দেন
২. ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহ দুঃখ মুছে দেন
৩. ধৈর্যের পুরস্কার উত্তম রিজিক ও মানসিক প্রশান্তি।
৪. হেদায়াতের পথ সবসময় খোলা
৫. পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতই জীবন বদলে দিতে পারে
৬. মা-বাবার দোয়া এবং দুহাত তুলে কান্না কখনও বৃথা যায় না
৭. আল্লাহর উপর ভরসা করলেই আল্লাহ যথেষ্ট হয়ে যান

আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার বান্দার ধারণার চেয়েও কাছাকাছি।’ আজ আপনার জীবনেও যদি অন্ধকার নামে—একবার বলে দেখুন- ‘حسبنا الله و نعم الوكيل ‘আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম সাহায্যকারী।’ আল্লাহ হৃদয়ের কান্না শুনেন—আপনারটাও শুনবেন, ইনশাআল্লাহ।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর