আরবি সফর শব্দের অর্থ- ভ্রমণ, যাত্রা, প্রস্থান, রওনা ইত্যাদি। আর যিনি সফর করেন তাকে বলা হয় মুসাফির। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো দোষ নেই‘ (সুরা নিসা: ১০১)
কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে তার এলাকা পেরুলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬, আহসানুল ফতোয়া: ৪/১০৫)। আকাশ পথে সফরের ক্ষেত্রেও দূরত্বের হিসাব স্থলভাগের সমান, অর্থাৎ স্থলভাগের ৭৮ কিলোমিটার পরিমাণ দূরত্বের সফর হলে আকাশপথে মুসাফির হবে। (রদ্দুল মুখতার: ১/৭৩৫)
বিজ্ঞাপন
শহরের ক্ষেত্রে নিজ এলাকার সীমানা বলতে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত সীমানাকে বুঝাবে। সফর থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের মাধ্যমেই তার সফরের বিধান শেষ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুখতার: ২/১২৮)
পার্বত্য এলাকায় সফরও সমতলে চলার হিসেবেই হবে, অর্থাৎ পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালুসহ দূরত্বের হিসাব হবে।’ (ফাতহুল কাদির: ২/৩১, আল বাহরুর রায়েক: ২/২২৯)
মুসাফিরের নামাজের বিধান
সফরকারীকে শরিয়তের বিধি-বিধানে কিছু শিথিলতা দিয়েছে ইসলাম, যেমন চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে। সফরে রোজা না রেখে পরবর্তী সময়ে কাজা করলেও চলবে। একইভাবে মোজায় মাসেহ করা ইত্যাদি বিধানেও সাধারণ অবস্থা থেকে ভিন্নতা রয়েছে। সফর অবস্থায় কেউ ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে তার গুনাহ হবে। এক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পড়া শুরু করে, তাহলে যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না, পুনরায় পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৯১)
মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পেছনে ইকতেদা করলে সে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে। (আল মাবসুত, সারাখসি: ১/২৪৩)
মুকিম ব্যক্তি মুসাফির ইমামের পেছনে ইকতেদা করলে দুই রাকাতে ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুকিম মুক্তাদি দাঁড়িয়ে সুরা পড়া ছাড়া বাকি দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেবে। সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ মুকিম অবস্থায় কাজা করলে ‘কসর’ই আদায় করবে, আর মুকিম অবস্থার ছুটে যাওয়া নামাজ সফরে কাজা করলে তা পূর্ণ আদায় করবে। (হেদায়া: ১/৮১)
স্থায়ী-অস্থায়ী আবাসের বিধান
স্থায়ী আবাসস্থল পরিবর্তন করে অন্যস্থানে মূল আবাস গড়লে স্থায়ী বসবাসের জন্য সেখানে না যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আগের অবস্থানস্থল মৌলিক আবাসন হিসেবে গণ্য হবে না, এমনকি সেখানে তার মালিকানা জায়গা-জমি থাকলেও নয়, বরং সেখানেও সফরের সীমানা অতিক্রম করে গেলে মুসাফিরই থাকবে। (আল মাবসুত, সারাখসি: ১/২৫২)
কোনো জায়গায় ১৫ দিন বা ততোধিক অবস্থানের নিয়ত করলে সে সেখানে মুকিম হয়ে যাবে। সেখান থেকে সামানা-পত্রসহ প্রস্থানের আগ পর্যন্ত সেখানে পূর্ণ নামাজ পড়বে এবং মুকিমের বিধান জারি থাকবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১০৪)
মেয়েদের সফরের বিধান
মহিলারা বিবাহের আগ পর্যন্ত তার বাবার বাড়িতে মুকিম থাকবে। তবে বিয়ের পর যদি স্বামীর বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে এবং বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে, তাহলে বাবার বাড়িতে মুসাফির থাকবে, আর যদি বাবার বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে, তাহলে তা তার মূল অবস্থানস্থল হিসেবেই ধর্তব্য হবে। (আল বাহরুর রায়েক: ২/১২৮, রদ্দুল মুখতার: ২/১৩১)। একইভাবে পুরুষ তার শ্বশুরবাড়িতে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে সেখানে সে মুসাফিরই থাকবে।
মুসাফিরের সুন্নত পড়ার বিধান
মনে রাখতে হবে, কসর শুধু ফরজের ক্ষেত্রে। সুন্নত পড়লে পুরোটাই পড়বে। কেননা সুন্নত নামাজের কসর হয় না।
মুসাফির ব্যক্তির জন্য চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়ো থাকলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। (এলাউস সুনান: ৭/১৯১, রদ্দুল মুখতার: ১/৭৪২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল মুসাফিরকে ইসলামি বিধিবিধান যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

