শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যে গুনাহ আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গেই মাফ করে দেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

যে গুনাহ আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গেই মাফ করে দেন

ইসলামে আল্লাহর রহমত যেমন অবারিত, তেমনি তাঁর ক্ষমাও সীমাহীন। আল্লাহ এমন পরাক্রমশালী, যিনি বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন; আবার অনুতপ্ত হলে অতীত জীবনের পাপকে পুণ্যেও রূপান্তর করে দেন। বান্দার কিছু গুনাহ আল্লাহ তাআলা সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা করে দেন—কোনোরূপ বিলম্ব ছাড়াই! বিশেষ করে গুনাহের পর দ্রুত তাওবা করলে আল্লাহ খুশি হন এবং সঙ্গেসঙ্গে ক্ষমা করে দেন। আসলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে কোনো বান্দার সব গুনাহ নিমিষেই ক্ষমা করে দিতে পারেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা জুমার: ৫৩) এই আয়াতই নির্দেশ করে—আল্লাহ চান বান্দা ফিরে আসুক, তাওবা করুক, আর তিনি সঙ্গে সঙ্গেই মাফ করে দিন।


বিজ্ঞাপন


যেসব গুনাহ সঙ্গে সঙ্গেই মাফ হয়ে যায়

১. আচমকা কোনো গুনাহ করে সঙ্গে সঙ্গে ইস্তিগফার করা
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গুনাহ করে ফেলল, এরপর অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৩০০৬, সহিহ)

২. সত্যিকারের তাওবা করে চোখের পানি ঝরানো
রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)

আরও পড়ুন: বান্দার যে হকটি বান্দাও মাফ করতে পারে না


বিজ্ঞাপন


৩. গোপনে গুনাহের জন্য গোপনে ইস্তিগফার করলে
‘যে ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে গুনাহ করে, আর গভীর রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়—আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা ফিরে এসেছে, আমি তাকে মাফ করে দিলাম।’ কিন্তু যদি গোপন পাপের কথা সে মানুষকে ফাঁস করে দেয়, তাহলে তার ক্ষমা নেই। হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘আমার সব উম্মত মাফ পাবে, পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত। আর একপ্রকার প্রকাশ এই যে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়, ‘হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করেছিল যে আল্লাহ তার পাপ গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে তার ওপর আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলে। (বুখারি: ৬০৬৯, মুসলিম: ২৯৯০)

সবচেয়ে দ্রুত মাফযোগ্য গুনাহ

নজরের গুনাহ (চোখের গুনাহ)
চোখের অজান্তেই কেউ হারাম জিনিস দেখে ফেললে, সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় ও ইস্তিগফার করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। রাসুলুল্লাহ (স.) আলী (রা.)-কে বললেন, ‘হে আলী, কোনো নারীকে একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা তোমার জন্য প্রথমবার দেখার (অনিচ্ছাকৃত) অনুমতি (ক্ষমা) আছে; কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা জায়েজ নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২১৪৯)

আরও পড়ুন: বান্দার ওপর আল্লাহর ১১ হক

ছোটখাটো যেসব গুনাহ বিশেষভাবে মাফযোগ্য
তিনটি কাজের মাধ্যমে অনেক ছোটখাটো গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যেমন- ১. নিয়মিত অজু করা। ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করে, তার আগের সব ছোটখাটো গুনাহ মাফ হয়ে যায়।’ (মুসলিম: ২৪৪) ২. নিয়মিত নামাজ পড়া। ‘এক নামাজ থেকে অন্য নামাজ, এক জুমা থেকে অন্য জুমা—এই সময়ে যে গুনাহ হয়, তা মাফ হয়ে যায় যদি বড় গুনাহ না করে থাকে।’ (মুসলিম: ২৩৩) ৩. রাতে ঘুমানোর আগে তাওবা করা। ‘যে ব্যক্তি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিনবার এই ইস্তেগফার  أَسْتَغْفِرُ اللّهَ َالَّذِيْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ পড়ে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন।’ (তিরমিজি: ৩৩৯৭)

যে গুনাহ দ্রুত মাফ হয় না

বান্দার হক বা অন্যের ওপর জুলুম করা হলে শুধু তাওবায় তা মাফ হয় না, বরং ক্ষতিপূরণ দিতে হয় বা ক্ষমা চাইতে হয়, এরপর তাওবাও করতে হয়। ইমাম নববি (রহ.) বলেন- ‘কেউ যদি কোনো বান্দার হক নষ্ট করে তাহলে তার তাওবা কবুল হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাহে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। ৪। হকদারের হক পৌঁছে দেওয়া। যদি এ চারটি শর্তের কোনো একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তাওবা শুদ্ধ হবে না। (রিয়াদুস সালেহিন, পৃ. ৩৩, ফতোয়া লাজনাতুদ দায়েমা: ৪/১৬৫)

শেষ কথা, আল্লাহর দয়ার দরজা সব সময় খোলা। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। বান্দা যখন আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়, তখন আল্লাহ এতটাই খুশি হন যে, তিনি শুধু গুনাহ মাফই করেন না, বরং তা পুণ্যে রূপান্তরও করে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘তবে যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুণ্যে রূপান্তর করে দেন।’ (সুরা ফুরকান: ৭০)

মোটকথা, গুনাহ করে ফেললে বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গেই ইস্তিগফার করা উচিত। রাতে ঘুমানোর আগে নিজের দিনভর গুনাহের হিসাব করে আত্মসমালোচনা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। ছোটখাটো আমলকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। এক ফোটা অশ্রু, একটি ইস্তিগফার, একটি ভালো কাজ হয়ে যেতে পারে গুনাহ মাফের চাবিকাঠি।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর