ইরান, যা ইতিহাসে পারস্য নামে পরিচিত, ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। নবীজির (স.) যুগের সম্মানিত সাহাবিদের কেউ কেউ ইসলাম প্রচার, জিহাদ ও প্রশাসনিক দায়িত্বে এই অঞ্চলে এসেছিলেন। তাঁদের পদচিহ্ন আজো ইরানের বিভিন্ন শহরজুড়ে ইতিহাসের নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
১. হজরত সালমান ফারসি (রা.)
যে কারণে বিখ্যাত: সত্যের সন্ধানে পারস্য থেকে মদিনা পর্যন্ত দীর্ঘ সফরের পথিক। খন্দকের যুদ্ধে তাঁর কৌশলগত পরামর্শ ছিল ঐতিহাসিক। নবীজি (স.) তাঁকে আহলে বাইতের সদস্য ঘোষণা করেন।
জন্মস্থান: ইসফাহান, পারস্য
সমাধিস্থল: মাদায়েন (বর্তমান ইরাক, পারস্যসীমান্তবর্তী)
(রেফ: সহিহ বুখারি, মুসলিম, ইবনু কাসির)
২. হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.)
যে কারণে বিখ্যাত: ‘নবীর গোপন তথ্যের বাহক’ নামে খ্যাত। তিনি মুনাফিকদের বিষয়ে নবীজির (স.) কাছ থেকে বিশেষ তথ্য পেতেন।
অবস্থান: মাদায়েন (বর্তমান ইরাক-ইরান সীমান্ত)
কার্য: পারস্য বিজয়ে অংশগ্রহণ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব
(রেফ: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবন কাসির)
আরও পড়ুন: ইরান কেন ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে?
৩. হজরত হুজর ইবনে আদি (রা.)
যে কারণে বিখ্যাত: সৎকাজে উদ্দীপক ও অন্যায় প্রতিরোধকারী সাহাবি। হজরত আলী (রা.)-এর পক্ষের একজন সাহসী সমর্থক ছিলেন।
অবস্থান: রাই (বর্তমান তেহরান অঞ্চল)
ঘটনা: মুয়াবিয়া (রা.)–এর শাসনামলে শহীদ হন।
(রেফ: তারিখে তাবারি, তারিখে দিমাশক)
৪. হজরত সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.)
যে কারণে বিখ্যাত: আশারায়ে মুবারাকার অন্তর্ভুক্ত। কাদিসিয়ার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে পারস্য বিজয়ের দ্বার খুলে দেন।
কার্য: পারস্যের বিভিন্ন যুদ্ধে সেনাপতি ও কুফা নগর প্রতিষ্ঠাতা
(রেফ: ফুতুহুল বুলদান, ইবনে সাদ, তাবারি)
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে হাদিসে কী আছে
৫. হজরত আবদুল্লাহ ইবন হুদাইফা আস-সহমি (রা.)
যে কারণে বিখ্যাত: হজরত আবদুল্লাহ ইবন হুদাইফা আস-সহমি (রা.) ছিলেন রাসুল (স.) একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবি। তিনি তাঁর সাহসি কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনের জন্য পরিচিত ছিলেন, বিশেষ করে পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজের কাছে চিঠি বাহক হিসেবে এবং রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের হাতে বন্দী ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনার জন্য তিনি বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।
(রেফ: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
৬. হজরত মুগিরা ইবনু শুবা (রা.)
অবস্থান: খুজিস্তান অঞ্চলে প্রশাসনিক দায়িত্ব
(রেফ: আল-তাবারি, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
৭. অন্যান্য সাহাবি ও তাবেঈনের পদচিহ্ন
খুজিস্তান, তাবারিস্তান ও হোরমোজগানসহ ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু সাহাবি ও তাবেঈ (দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের মুসলমান) ইসলাম প্রচার, শাসন ও জিহাদের কাজে অংশ নিয়েছেন।
এ অঞ্চলগুলোতে মুসলিম শাসনের সূচনা হয় তাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে। সাহাবিদের এই অবদান ইসলামের বিস্তারে অমলিন দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
আজো এই স্মৃতিবহ স্থানগুলো ইসলামি ইতিহাসের জীবন্ত দলিল এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য শ্রদ্ধা, অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা গ্রহণের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
ইরান তথা পারস্যভূমি ছিল ইসলামের প্রথম যুগে সাহাবিদের দীপ্ত পদচারণার এক বিশাল অধ্যায়। এখানকার মাটি আজো তাঁদের স্মৃতির সৌরভ বহন করে। ইতিহাসের আলোকে এসব অঞ্চল মুসলিম বিশ্বে গভীর সম্মান ও তাৎপর্য বহন করে চলেছে।

