বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

বন্যায় ধ্বংস হওয়া দুই জাতি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২২, ০৩:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

বন্যায় ধ্বংস হওয়া দুই জাতি

বন্যা ও প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের ঘটনা সকল জাতির ইতিহাসে আছে। তবে, আল্লাহ তাআলা কিছু বন্যা দেন শুধুই ধ্বংস করার জন্য। বান্দার অবাধ্যতা যখন সীমা ছেড়ে যায়, তখন সেই জাতীকে আল্লাহ গজব দিয়ে ধ্বংস করে দেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দুই জাতিকে আল্লাহ তাআলা বন্যার মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন। যেমন নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়সাবা জাতি। 

নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা 
নুহ (আ.) একজন বিশিষ্ট নবী ছিলেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর নামের উল্লেখ আছে ৪৯ বার এবং একটি সুরার নাম ‘নুহ’। প্রায় হাজার বছর আয়ুষ্কালে তিনি মানুষের হেদায়াতে সচেষ্ট থাকলেও তা ছিল প্রায় নিষ্ফল। মাত্র ৪০ জোড়া ‘সামানিন’ (৮০ জন) নর-নারী ইসলামের সুশীতল ছায়ায় সমবেত হয়, অন্যরা নুহ (আ.)-কে অতিষ্ঠ করে তোলে। অতঃপর ভয়াবহ বন্যার করাল গ্রাসে নিঃশেষ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা নুহ (আ.)-কে বন্যার পূর্বাভাস দেন এবং নৌকা তৈরির নির্দেশ দেন। নৌকা তৈরি ও আনুসাঙ্গিক কাজ শেষ হওয়ার পর জ্বলন্ত চুলার তলদেশ থেকে পানি উক্ষিপ্ত হয়ে প্রবল বন্যার সূচনা হয়।


বিজ্ঞাপন


এই বন্যায় অবিশ্বাসীদের অধ্যায় শেষ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...তারপর মহাপ্লাবন ওদের গ্রাস করে। কেননা ওরা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী। তারপর আমি তাকে ও যারা জাহাজে উঠেছিল তাদের রক্ষা করলাম...।’ (সুরা আনকাবুত: ১৪-১৫)

বন্যার বিপর্যয় শেষে পাহাড়ের চূড়া ভাসতে লাগল, আস্তে আস্তে নুহ (আ.)-এর কিশতি ‘জুদি’ পাহাড়ে ভিড়ল। এ বন্যার ভয়াবহতা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘...আমি ওদের ঢেউ-তাড়ানো আবর্জনার মতো করে দিলাম...।’ (সুরা মুমিনুন: ৪১)

সাবা জাতির ঘটনা
নদী শাসন, নগরায়ণ, পর্যটন ইত্যাদিতে চরম উন্নতি সাধন করেছিল সাবা জাতি। নগরের সুরক্ষার জন্য নির্মাণ করেছিল ১২টি শক্তিশালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। মহাসুখের সব আয়োজনশেষে তাদের পেয়ে বসেছিল অনাচার ও অবাধ্যতার অসুখ। ফলে তাদের ওপরও আল্লাহর গজব আপতিত হয়। 

পবিত্র কোরআনে ‘সাবা’ নামক সুরায় এদের অবাধ্যতা, পতন ও পরিণতির খোঁজ মেলে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সাবা অধিবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল একটি নিদর্শন: দুটি উদ্যান, একটি ডানে এবং অন্যটি বাঁয়ে... তারপর তারা অবাধ্যতা করল। ফলে আমি তাদের ওপর প্রেরণ করলাম প্রবল বন্যা। আর তাদের দুই বাগানকে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুই বাগানে, যাতে উদ্গত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ।’ (সুরা সাবা: ১৫-১৬)


বিজ্ঞাপন


মহান আল্লাহ সাবা জাতির হেদায়েতের জন্য ১৩জন নবী পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তারা ঈমান আনেনি। তাদেরকে আজাব দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছিলেন ‘ইঁদুর বাহিনী’। আল্লাহর হুকুমে ইঁদুর বাঁধ কেটে দিলে জোয়ারের পানিতে ওদের সব সাফল্য ও দম্ভ তলিয়ে যায়। এতে ওই এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।

প্রসঙ্গত, আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের গজব দেন না, বরং তাদের পরীক্ষা করার জন্য, পাপাচার থেকে ফিরে আসার জন্য এবং গুনাহ ক্ষমা করার জন্য নানা বিপদ মসিবত দিয়ে থাকেন। বন্যার কারণ হিসেবে মানবসৃষ্ট নানা পরিকল্পনার ত্রুটি ও দুর্বল প্রতিরোধব্যবস্থাকে দায়ী করা হলেও ইসলাম অনুযায়ী, এটি আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না’ (সুরা তাগাবুন: ১১)। 

বন্যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বন্যার্ত ও বন্যামুক্ত সবাইকে পরীক্ষা করেন। অন্যের বিপদে যারা এগিয়ে আসার ক্ষমতা রাখেন, তাদের মনে রাখতে হবে যে, তাদের ওপর বন্যার্ত অসহায়দের হক রয়েছে। সাহাবি সাদ (রা.)-কে রাসুল (স.) বলেছিলেন, ‘দুর্বল লোকদের দোয়ার কারণেই তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দেওয়া হয়।’ (বুখারি, মেশকাত: ৫২৩২) 

যাদের সম্বল আছে তাদেরকে টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া, নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করা ইত্যাদি সবকিছু মানবিক দায়িত্বের অন্যতম খাত। এ ধরণের সাহায্যকারীদের আল্লাহ তাআলা রহমত করেন। তাদেরকে আল্লাহ দয়া না করে পারেন না। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি: ১৭৩২)

আর বন্যার্তদের ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...হে নবী! আপনি তাদের জান্নাতে সুখের দিনের সুসংবাদ দিন’ (সুরা বাকারা: ১৫৫।) মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমন ধৈর্যধারণ করেছেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসুলগণ’ (সুরা আহকাফ: ৩৫)। আরও  ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে তারাই সফলকাম।’ (সুরা: মুমিনুন: ১১১)

এছাড়াও বিপদের আগে-পরে তওবা-ইস্তেগফারে অভ্যস্ত হতে হবে, আল্লাহভীতি গুণ অর্জন করতে হবে। আর আল্লাহ তাআলার কাছে সবসময় দোয়া করতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ তৈরি করে দেন’ (সুরা তালাক: ০২)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বড় পরীক্ষা ও গজব থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর