সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঈদুল আজহার প্রস্তুতি: ছোট্ট এই আমলটি বাড়িয়ে দিন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

ঈদুল আজহার প্রস্তুতি: ছোট্ট এই আমলটি বাড়িয়ে দিন

পবিত্র ঈদুল আজহা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের দিন। এই দিনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন, যা হজের অন্যতম শিক্ষা ও তাকওয়ার প্রকাশ। কিন্তু শুধু পশু কোরবানি নয়, ঈদুল আজহার প্রস্তুতিতে কিছু বিশেষ আমলও রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাকবিরে তাশরিক বলা। এটি এমন একটি ছোট্ট আমল, যা ঈমানী অনুভূতিকে জাগ্রত করে এবং ঈদের পরিবেশকে আরও ইবাদতমুখর করে তোলে।

কী এই তাকবির?

তাকবিরে তাশরিক বলা হয় ৯ জিলহজ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজ আছর পর্যন্ত, প্রতিটি ফরজ নামাজের পর একবার আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব ঘোষণা করা। ইসলামি শরিয়তে তাকবিরে তাশরিক প্রত্যেক মুসলমান, পুরুষ ও নারী—সবার জন্য ওয়াজিব। প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের—সবার ওপর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার: ২/১৮০)

তাকবিরে তাশরিকের বাক্য

আরবি: اَللّٰهُ أَكْبَرُ، اَللّٰهُ أَكْبَرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَاللّٰهُ أَكْبَرُ، اَللّٰهُ أَكْبَرُ، وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু,
ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।


বিজ্ঞাপন


অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

আরও পড়ুন: তাকবিরে তাশরিকের বিধান, নিয়ম ও ফজিলত

ঈদের প্রস্তুতিতে এই আমল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এটি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ। ঈদের আনন্দ শরিয়তের দৃষ্টিতে পূর্ণতা লাভ করে এই তাকবিরের মাধ্যমে। সাহাবায়ে কেরাম মসজিদ, বাজার, ঘর সব জায়গায় এই তাকবির বলতেন। এর মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশে ইবাদতের আবেশ ছড়িয়ে দিতেন।

তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী করিম (স.) বলেন, ‘জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।’ (সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

তাকবিরে তাশরিকের ঐতিহাসিক পটভূমি

হাদিস অনুযায়ী, ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি প্রস্ততির সময় এই কথাগুলো প্রথম উচ্চারিত হয়। ইবনে আবি শায়বা (৫৬৪৭) ও ইমাম বায়হাকির (৩/৩১৫) বর্ণনায় এসেছে— ‘ইবরাহিম, ইসমাঈল ও জিবরাঈল (আ.)-এর মুখে এই তাকবির উচ্চারিত হয়।’ 

তাশরিকের দিনগুলোতে সাহাবিদের আমল

সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে সর্বদা আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলতেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বাজারে গিয়ে তাকবিরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাঁদের সাথে তাকবিরের সূর তুলত। ইবনে ওমর (রা.) পথে-ঘাটে, হাঁটা-বসায়, বাজারে-ঘরে এবং নামাজের পরে শুধুই তাকবির বলতে থাকতেন। মিনার দিনগুলোতো তাঁর তাকবিরের সাথে সমস্বরে মানুষের তাকবিরে মিনার পুরো অঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠত। মহিলারাও (নিচু স্বরে) তাকবীর বলতে থাকতেন। (বুখারি-ফাতহুল বারি: ২/৫৩০-৫৩৬)

আরও পড়ুন: জিলহজে চুল-নখ না কাটা সুন্নত, মোস্তাহাব নাকি আবশ্যক?

মুসলিম উম্মাহর করণীয়

  • ৯ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা।
  • পরিবারের সদস্যদেরও তাকবির পড়তে উৎসাহিত করা।
  • নামাজের বাইরেও তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবিরের আমল চালু রাখা
  • বাজার বা হাটে গেলেও অন্তরালে বা স্পষ্ট ভাষায় তাকবির পাঠ করা, যাতে সাহাবিদের সুন্নত বজায় থাকে।

ঈদুল আজহার প্রস্তুতিতে কোরবানির পশু কেনা, খাবার প্রস্তুত, জামা-কাপড়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি এই ছোট্ট কিন্তু শক্তিশালী আমলটি যেন আমরা না ভুলে যাই। এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নাত এবং সাহাবিদের আমল—যা ঈদের মাহাত্ম্যকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে। আসুন, তাকবিরের মাধ্যমে ঈদের প্রস্তুতি শুরু করি—আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর