রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কুড়িয়ে ফল খেলে পরের হক নষ্ট হবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২২, ০৩:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

কুড়িয়ে ফল খেলে পরের হক নষ্ট হবে কি?

বান্দার হক ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ অপরের হক নষ্ট করলে যতক্ষণ পর্যন্ত ওই বান্দা ক্ষমা করবে না, ততক্ষণ তা আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। এমনকি কোনো আমলের মাধ্যমেও তা মাফ হবে না। তাই অন্যের গাছের ফল কুড়িয়ে খেলে পরের হক নষ্ট হয় কি না বা এ সম্পর্কে ইসলামের বিধান জানতে চান অনেকে। কারো জীবনে এমন ঘটনাও আছে, গাছের মালিককেই চেনেন না, কিন্তু অনুমতি ছাড়া ফল খেয়ে এখন দুশ্চিন্তা করছেন। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো। 

মালিকের পক্ষ থেকে যদি কোনো বাধা-নিষেধ না থাকে, তাহলে তার মালিকানাধীন গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল কুড়িয়ে খাওয়া জায়েজ। কিন্তু যদি এ ব্যাপারে মালিকের অসম্মতি বা অসন্তুষ্টি বোঝা যায়, তখন পড়ে থাকা ফল কুড়িয়ে নেওয়া জায়েজ হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার: ৪/২৮৪; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ৩/৩৯১; আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/৫৪; আন-নাহরুল ফায়েক: ৩/২৮৪)

অনুমতি নেওয়ার মতো কাউকে না পেলে, ক্ষুধার্ত ব্যক্তির জন্য ওই ফল খাওয়া জায়েজ আছে। তবে, ফল নেওয়ার আগে তিনবার আওয়াজ দিতে হবে। এর প্রমাণ হচ্ছে— সামুরা বিন জুনদুব (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন—

 তোমাদের কেউ যখন কোনো ছাগপালের নিকট আসবে (তখন দুধ পানের উদ্দেশ্যে) তার মনিবের অনুমতি নিবে। যদি সেখানে কেউ না থাকে, তাহলে তিনবার আওয়াজ দিবে। অতঃপর উত্তর পেলে তার অনুমতি নিবে। আর যদি কেউ উত্তর না দেয়, তাহলে দুধ দোহন করবে ও পান করবে। কিন্তু বহন করে নিয়ে যাবে না।’ (আবু দাউদ: ২৬১৯; মেশকাত: ২৯৫৩) 

উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, ক্ষুধার্ত ব্যক্তি ক্ষুধা নিবারণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতে পারবে, কিন্তু বহন করে নিয়ে যেতে পারবে না। তবে, ক্ষুধার্ত না হলে গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল মালিকের অনুমতি ছাড়া খাওয়া বৈধ নয়। যদি মালিকের অনুমতি থাকে, চাই তা প্রত্যক্ষভাবে হোক বা পরোক্ষভাবে, তাহলে বৈধ হবে। (রদ্দুল মুখতার: ৬/৪৪৪; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৯৩; মাজমাউল আনহুর: ২/২৫৬; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৩/৩৭৯)

ছোট থাকা অবস্থায় অনুমতি ছাড়া অচেনা কারো গাছের কুড়ানো ফল খেয়ে থাকলে ওটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ছোটকালের যেকোনো ত্রুটি আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ নাবালেগ ছেলে-মেয়েরা মাসুম বা নিষ্পাপ হয়। হাদিসে আছে, ‘তিন শ্রেণির মানুষ থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে; ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত, নাবালেগ বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং পাগল ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত।’ (আবু দাউদ: ৩০১৬)

আর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কারো অসম্মতি বা অসন্তুষ্টির পরও যতগুলো ফল খেয়েছেন; ফলের মালিককে সেগুলোর মূল্য পরিশোধ করতে হবে অথবা মাফ চেয়ে নিতে হবে। এই দুইটির কোনো একটি আবশ্যক। তা না হলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। কারণ তা বান্দার হক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে হারাম খাওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর