রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মৃত্যুর ছয় ধাপ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২২, ০১:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মৃত্যুর ছয় ধাপ
প্রতীকী ছবি

সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কোরআন-হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মৃত্যুর সময় থেকে প্রাণ বা রুহ বের হওয়ার আগ পর্যন্ত মৃত্যুপথযাত্রীকে কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়, যেগুলোকে আলেমরা ছয় ভাগে ভাগ করেছেন। নিচে ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

প্রথম ধাপ
আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দেবেন বান্দার প্রাণবায়ু বের করে  আনতে। যার মৃত্যু হতে যাচ্ছে, সে তখনও জানবে না। তবে, দেহে কিছু পরিবর্তন অনুভব করবে। মুমিনের অন্তরে প্রশান্তি অনুভব হবে আর পাপিষ্ঠ বুকে খুব চাপ অনুভব করবে। এ দিন শয়তান ও দুষ্ট জিন ফেরেশতাদের আকাশ থেকে নামতে দেখবে, কিন্তু মানুষ দেখবে না। এ ধাপটির কথা কোরআনে এসেছে এভাবে—


বিজ্ঞাপন


‘আর তোমরা সে দিনের ভয় করো, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা উপার্জন করেছে, তা পুরোপুরি দেওয়া হবে। আর তাদের জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৮১)

দ্বিতীয় ধাপ
এটি হচ্ছে ধীরে ধীরে বান্দার ভেতর থেকে প্রাণ বের করার ধাপ। এই ধাপে প্রাণবায়ু পায়ের পাতা থেকে শুরু করে গোছা, হাঁটু, পেট, নাভি ও বুক হয়ে কণ্ঠনালির নিচের দুই কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এ সময় মানুষ ক্লান্তি ও অস্থিরতা অনুভব করে এবং এক ধরনের অসহনীয় চাপ অনুভব করে। তখনও সে জানতে পারে না যে, তার রুহ বের হয়ে যাচ্ছে।

তৃতীয় ধাপ
এই ধাপে প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে যায়। কুরআনে এ স্তরের কথা বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে—‘কখনো না, যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে এবং বলা হবে, কে ঝাড়বে এবং সে মনে করবে যে, বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে’। পায়ের গোছা অন্য গোছার সঙ্গে জড়িয়ে যাবে।’ (সুরা কিয়ামাহ: ২৬-৩০)
কে ঝাড়বে অর্থাৎ স্বজনদের কেউ কেউ হয়ত বলবে—ডাক্তার ডাকি, অন্যজন বলবে ইমারজেন্সিতে কল করি, আবার কেউ বলবে কোরআন পড়ে ফুঁ দেই। এই ধাপে সে চাইবে মৃত্যু থেকে বাঁচতে, কিন্তু কেউই তাকে সুস্থতা দিতে সক্ষম হবে না।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তখন হবে দুনিয়ার শেষ দিন এবং আখেরাতের প্রথম দিনের সম্মিলন। সে সময় দুটি বিপদ একসাথে হাজির হবে। একটি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিপদ, আরেকটি গ্রেফতার হয়ে আখেরাতের জীবনে যাওয়ার বিপদ। তাই পাপী ব্যক্তি খুব পেরেশান থাকবে। (দেখুন: ইবনে কাসির)

চতুর্থ ধাপ
মৃত্যুর এটাই সর্বশেষ ও চূড়ান্ত স্তর। এ সময় তার চোখের পর্দা সরিয়ে দেওয়া হবে, তখন সে চারপাশে উপস্থিত ফেরেশতাদের দেখতে পাবে। এখান থেকেই আখেরাত দেখার স্তর শুরু হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমার সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, এখন তোমার দৃষ্টি প্রখর।’ (সুরা কাফ: ২২)
এই অবস্থায় মৃত্যুর ফেতনা উপস্থিত হয়। শয়তান এই ফেতনায় প্রবেশ করে এবং আকিদায় সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। আল্লাহর ব্যাপারে, নবী, দীন ও কোরআনের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে তার অন্তরে। শয়তান সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে যেন সে কাফের হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। এ সময়টাতে সে তার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী আঘাত হানতে থাকে। 

এজন্যই কোরআন আমাদের মৃত্যুর ফেতনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় নিতে বলছে—
وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ . وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ
আপনি বলুন, হে আমার রব! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি শয়তানের প্ররোচনা থেকে এবং আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি তাদের উপস্থিতি থেকে। (সুরা মুমিন: ৯৭-৯৮)

পঞ্চম ধাপ
এ স্তরে মানুষ পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারবে সেকি জান্নাতি না জাহান্নামি। সে তার তার পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারবে। রাসুল (স.) এই স্তর নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন। বিশেষভাবে যারা বিভিন্ন গুনাহে লিপ্ত ছিল এবং তওবা না করেই পাহাড়সম পাপ নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শপথ সেই ফেরেশতাদের যারা নির্মমভাবে (রুহ) টেনে বের করে’ (সুরা নাজিয়াত: ০১)। এখানে আজাবের সেসব ফেরেশতাদের বোঝানো হয়েছে, যারা কাফেরের আত্মা নির্মমভাবে বের করে। (ফাতহুল কাদির)

একদল ফেরেশতা থাকবে, যারা আগুনের কাফন প্রস্তুত করে এবং খুব নির্দয়ভাবে পাপী ব্যক্তির রুহ কবজ করে। কোনো মুমিন বান্দার যখন দুনিয়া ত্যাগ করে আখেরাতে পাড়ি জমানোর সময় উপস্থিত হয়; তখন আসমান থেকে সাদা চেহারাবিশিষ্ট ফেরেশতারা নিচে নেমে আসেন। তাদের চেহারা সূর্যের মতো আলোকোজ্জ্বল। তাদের সঙ্গে থাকে বেহেশতের কাফন ও আতর। সেদিন পাপী বান্দার কঠিন পরিস্থিতির চিত্র সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে—

‘ফেরেশতারা যখন তাদের মুখমণ্ডল এবং পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে তাদের প্রাণ হরণ করবে তখন তাদের কী দশা হবে? (সুরা মুহাম্মদ: ২৭)

ষষ্ঠ ধাপ
এই ধাপে মানুষের রুহ বের হওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুত নিয়ে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়। তখন রুহ বের হওয়ার জন্য এবং আজরাইল (আ.)-এর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য নাকে-মুখে অবস্থান করে। বান্দা যদি পাপীষ্ঠ হয়, তখন আজরাইল তাকে বলবে; হে নিকৃষ্ট আত্মা! তুমি আগুন ও জাহান্নামের এবং ক্রোধান্বিত ও প্রতিশোধপরায়ণ রবের উদ্দেশে বের হয়ে আসো। 

তখন তার অভ্যন্তরীণ চেহারা কালো হয়ে যাবে এবং চিৎকার করে বলবে, ‘হে আমার রব! আমাকে পুনরায় পাঠান যাতে আমি সৎকাজ করি, যা আমি পূর্বে করিনি।’ (সুরা মুমিনুন: ৯৯)

মৃত্যুর কঠিন দিন আসার আগে বান্দার সাবধান হওয়া জরুরি এবং সর্বাবস্থায় উচিত মৃত্যুকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে মৃত্যুর দিন সম্পর্কে সজাগ করে বলেন, প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ বদলা দেওয়া হবে। তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আল ইমরান: ১৮৫)

মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তিনি জীবনদান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই, কোনো সাহায্যকারীও নেই’ (সুরা তাওবা: ১১৬)। 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন এবং জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর