মহানবী (স.) কিছু খাবার ও পানীয় বেশি পছন্দ করতেন। তিনি যেসব খাবার খেতেন সেগুলো খাওয়া উম্মতের জন্য সুন্নত অর্থাৎ সেগুলো নবীজি খেয়েছেন বলেই কেউ খেলে তাঁর আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। নিচে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কিছু প্রিয় খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১) খেজুর: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত-আমি রাসুল (স.)-কে এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, এটিই সালন-মসলা।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩০)। রাসূল (সা.) আবারও বলেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়ির অধিবাসীরা অভুক্ত।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩১)। রাসুল (স.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
২) কিশমিশ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.)-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম)
৩) সারিদ: ইবনু ‘আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুল (স.)-এর কাছে একটি ‘পেয়ালায় করে সারিদ বা সুরুয়াতে ভিজানো রুটি আনা হলে নবী (স.) বললেন, তোমরা চতুর্দিক থেকে খাও, মধ্য থেকে খেও না, কেননা মধ্যেই বরকত বর্ষিত হয়। (বুলুগুল মারাম: ১০৫০)
৪) তরমুজ: হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) তাজা খেজুর দিয়ে তরমুজ খেতেন। তিনি বলতেন, এর ঠাণ্ডা ওটার গরম কমাবে এবং এর গরম ওটার ঠাণ্ডা কমিয়ে দেবে। (আবু দাউদ: ৩৮৩৬)
৫) লাউ: হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রাসুল (স.)-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী (স.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (স.)-এর সামনে রুটি এবং গোশতের টুকরা ও লাউ মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসুল (স.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে লাউ নিয়ে খাচ্ছেন। (শামায়েলে তিরমিজি: ২৬২)
বিজ্ঞাপন
৬) শসার সঙ্গে খেজুর: হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে স্বাস্থ্যবতী বানিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে পাঠাবেন। এজন্য তিনি অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন কিন্তু কোনো ফল হয়নি। শেষে তিনি আমাকে পাকা খেজুরের সঙ্গে শসা বা খিরা খাওয়াতে থাকলে আমি তাতে উত্তমরূপে স্বাস্থ্যের অধিকারী হই। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৯০৩)
৭) মাখন: আতিয়্যাহ বিন বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের এখানে এলেন। আমরা তার বসার জন্য আমাদের একটি চাদর পেতে দিলাম। পানি ছিটিয়ে আমরা তা তার জন্য নরম করে দিলাম। তিনি তার ওপর বসলেন। তখন আমাদের ঘরে মহান আল্লাহ তার ওপর অহি নাজিল করলেন। আমরা তার সামনে মাখন ও খেজুর পেশ করলাম। তিনি মাখন পছন্দ করতেন। (ইবনে মাজাহ: ৩৩৩৪)
৮) মিঠাই ও মধু: হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ (বুখারি: ৫১১৫; মুসলিম: ২৬৯৫)। বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’ (বুখারি: ৫৩৫৯)
৯) মোরগ: জাহদাম আল-জারমি (রহ.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, আমি আবু মুসা (রা.)-এর সামনে গেলাম। তিনি তখন মুরগির গোশত খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, আমার সামনে এগিয়ে এসো এবং খাবারে অংশগ্রহণ করো। রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমি মুরগির গোশত খেতে দেখেছি। এ ছাড়া আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমি মোরগের গোশত ভক্ষণ করতে দেখেছি। (তিরমিজি: ১৮২৬ ও ১৮২৭)
১০) ঘিয়ের সঙ্গে রুটি: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এ কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন। (ইবনে মাজাহ: ৩৩৪০)
১১) দুধ: হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুরাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ (বুখারি: ৮২)
১২) খাসির পায়া: হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল (স.) কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’
১৩) জলপাই: রাসুল (স.) বলেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। (তিরমিজি: ১৮৫১)
এছাড়াও তিনি মরুভূমির এক ধরনের পাখির গোশত, মাশরুম, বার্লি, গাজর, ডুমুর, আঙুর, ভিনেগার, ডালিম ও সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি পছন্দ করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়। নবীজির খাদ্যাভ্যাসে থাকা খাদ্যগুলো গবেষণা করে দেখা গেছে, তা মানবদেহের জন্য শুধু উপকারীই নয় বরং সর্বোৎকৃষ্ট।
বিজ্ঞানের আমূল উৎকর্ষের ফলে এ সকল খাবারের গুণাগুন আরও স্পষ্ট হয়েছে। উম্মতের প্রকৃত কল্যাণ যে নবীজির সুন্নত অনুসরণে সেটাই এর প্রমাণ।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নত অনুসরণের মাধ্যমে পবিত্র আহার গ্রহণ এবং সওয়াব লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

