রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

আগুন নিয়ে নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২২, ০২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

আগুন নিয়ে নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী

নির্ধারিত সময়ে সবার মৃত্যু হবে—এটা আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত বিধান। এর মধ্যে কিছু মৃত্যু আসে কোনো পূর্বলক্ষণ ছাড়াই। মহানবী (স.) এই আকস্মিক মৃত্যুকে কেয়ামতের আলামত হিসেবে অভিহিত করেছেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) নবী করিম (স.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কেয়ামতের আলামতসমূহের মধ্য থেকে এটিও একটি যে আকস্মিক মৃত্যু বৃদ্ধি পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৭৯১২)

আর এই আকস্মিক মৃত্যুর অন্যতম ধরণ হলো, অগ্নিকাণ্ডে বা অগ্ন্যুৎপাতে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু। তবে স্মরণ রাখতে হবে যে, এ ধরনের মৃতদের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ইসলাম। 


বিজ্ঞাপন


রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘..আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয় রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। (ইবনে মাজাহ: ২৮০৩)

বর্তমানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন কারখানা, ডিপো, চলন্ত বাস-ট্রেনেও হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠছে। তাই অনেকের মনেই প্রশ্ন, এটি কি সেই আগুনের সূত্রপাত, যা মহানবী (স.) কেয়ামতের আলামত হিসেবে বর্ণনা করেছেন?

শেষ জমানার আগুন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কেয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে প্রথম আলামত হলো পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে মানুষকে একত্রকারী আগুন। (বুখারি:  ৫৪৪৭)

এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত হিজাজের জমিন থেকে এমন আগুন বের হবে না, যা বসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।’ (বুখারি: ১০৫৪)


বিজ্ঞাপন


কেয়ামতের শেষ নিদর্শনও আগুন। এ সম্পর্কে হুজায়ফা ইবনে উসাইদ আল গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা পরস্পর আলোচনা করছিলাম, এমন সময় রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের কাছে এলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কী বিষয়ে আলোচনা করছিলে? উপস্থিত সাহাবিরা বলেন, কেয়ামত প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, কেয়ামত ওই পর্যন্ত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা তার আগে ১০টি আলামত দেখতে পাবে। অতঃপর তিনি ১০টি নিদর্শন উল্লেখ করেন—১. ধোঁয়া, ২. দাজ্জাল, ৩. দাব্বাতুল আরদ, ৪. সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়া, ৫. ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর আগমন, ৬. ইয়াজুজ-মাজুজ, ৭. তিনটি ভূমিধস। একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে, ৮. একটি ভূমিধস পশ্চিম প্রান্তে, ৯. একটি আরব ভূখণ্ডে, ১০. সর্বশেষ নিদর্শন হলো ইয়েমেন থেকে আগুন, যা মানুষকে তাড়িয়ে হাশরের ময়দানে একত্র করবে। (সহিহ মুসলিম: ২৯০১)

সালেম ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কেয়ামতের আগে হাজরামাউত থেকে অথবা হাজরামাউতের সাগরের দিক থেকে সহসাই একটি অগ্ন্যুৎপাত ঘটবে এবং তা মানুষকে একত্র করবে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! তখন আমাদের কী করার জন্য আপনি নির্দেশ দেন? রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা সিরিয়ায় আশ্রয় নেবে। (তিরমিজি: ২২৭১)

অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) নবী করিম (স.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কেয়ামতের দিন মানুষের হাশর হবে তিনভাবে। একদল যাবে আশা ও ভীতি নিয়ে। দ্বিতীয় দল হবে যারা এক উটে দুজন, তিনজন, চারজন বা দশজন আরোহণকারী। আর অবশিষ্টদের আগুন একত্র করবে। যেখানে তারা থাকবে, আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে থাকবে। তারা যেখানে রাত যাপন করবে, আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে রাত যাপন করবে। তারা যেখানে সকাল অতিবাহিত করবে, আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে থাকবে। তাদের যেখানে সন্ধ্যা হবে, আগুনেরও সেখানেই সন্ধ্যা হবে। (বুখারি: ৬২৭৩)

উপরের হাদিস পর্যালোচনা করে বর্তমান আলেমদের অনেকেই বলে থাকেন যে, কেয়ামতের আগের সেই বড় আলামতেরই পূর্বাবস্থা বর্তমান অগ্নিকাণ্ড।

তবে মনে রাখতে হবে, আগুন সবসময় আজাব হয়ে আসে না। কখনো এটি অপমৃত্যুরও কারণ। আর কেয়ামতের আগে আগুনের ব্যাপ্তি ও বিপর্যয়ের ফেতনা থেকে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর