কারো অর্থ বা সম্পদ আত্মসাৎ করা মানে বান্দার হক নষ্ট করা। এটি জঘন্যতম কবিরা গুনাহ। রাসুলুল্লাহ (স.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের মান-সম্মান, রক্ত, সম্পদ সব কিছু হারাম। (সহিহ বুখারি: ৬৮, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৯)
আবার মিথ্যা কসম খাওয়াও কবিরা গুনাহ। চাই তা কোনো বিপদ থেকে বাঁচার জন্যই হোক বা কারো সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার জন্যই হোক। আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন,
বিজ্ঞাপন
‘কবিরা গুনাহগুলো হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কাউকে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।’ (বুখারি: ৬৬৭৫, ৬৮৭০, ৬৯২০)
মিথ্যা শপথ করে সম্পদ আত্মসাতের পরিনাম
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা’ (সুরা নিসা: ২৯)। আরও বর্ণিত হয়েছে- ‘কিন্তু যারা কুফুরি করে, তারা ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে এবং জন্তু জানোয়ারের মতো উদরপূর্তি করে; আর জাহান্নামই তাদের নিবাস।’ (সুরা মুহাম্মদ: ১২)
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘কেউ কারো সম্পদ অবৈধভাবে আহরণের জন্য মিথ্যা কসম খেলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ দেবেন যে, তিনি (আল্লাহ) তার উপর খুবই রাগান্বিত।’ (বুখারি: ২৩৫৬, ২৩৫৭, ২৫১৬, ২৬৭০, ২৬৭৩, ২৬৭৬, ২৬৭৭)
একবার রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর পাশে উপবিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে বললেন-তোমরা কি জানো,গরীব কে? সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন- আমাদের মধ্যে তো গরীব তাদেরকে বলা হয়, যাদের কাছে ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা না থাকে। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন- প্রকৃত পক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে গরীব সে, যে কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা, জাকাত, সবকিছু নিয়ে উঠবে, কিন্তু তার এ কর্মগুলো থাকবে যে, সে দুনিয়াতে কারো সঙ্গে মন্দ আচরণ করেছে, কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে আঘাত করেছে, কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি, তাই এর বিনিময়ে কেয়ামতের দিন তার কিছু নেকি একে দিবে, কিছু নেকি ওকে দিবে! এভাবে দিতে দিতে বান্দার হক আদায়ের পূর্বে যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে! (সহিহ মুসলিম: ৬৪৭৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কসম করে কোনো মুসলমানের সম্পদ আত্মসাৎ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করেন। এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি সামান্য কোনো জিনিস হয়? তিনি বললেন, ‘যদিও পিপুল গাছের একটি ছোট ডাল হোক না কেন’ (মুসলিম: ১৯৬)। অন্য হাদিসে এসেছে, যদিও তা ‘আরাক’গাছের ডাল পরিমাণ হোক না কেন। যা মেসওয়াকের গাছ’। (মুসলিম: ১৩৭)
আল্লাহর দোহাই দিয়ে কেউ কিছু চাইলে তাকে দিতে হবে
আবু মুসা আশআরি (রা.) শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সে ব্যক্তি অভিশপ্ত, যে আল্লাহর দোহাই দিয়ে কিছু চায় এবং অভিশপ্ত সে-ও, যার কাছে আল্লাহর দোহাই দিয়ে কিছু চাওয়া হয়, আর সে (জিনিসটি) অবৈধ না হওয়া সত্ত্বেও তাকে তা দেয় না। (তাবারানি, সহিহুল জামে: ৫৮৯০)
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যার কাছে আল্লাহর দোহাই দিয়ে চাওয়া হয়, অথচ সে দেয় না। (তারিখুল বুখারি, সহিহুল জামে: ৩৭০৮)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, একদা ঈসা বিন মরিয়ম এক লোককে চুরি করতে দেখে বললেন, ’তুমি কি (অমুক জিনিস) চুরি করেছ?’ সে বলল, ’সেই আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, আমি চুরি করিনি।’ ঈসা বললেন, ’আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখছি এবং আমার চক্ষুকে মিথ্যা জানছি।’ (আহমদ: ৮১৫৪, বুখারি: ৩৪৪৪, মুসলিম ৬২৮৬, নাসায়ির কুবরা: ৬০০৩, ইবনে মাজাহ: ২১০২)
আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা শিরক
আজকের দিনে মিথ্যা শপথের আরও ভয়াবহ অবস্থা। অনেককেই দেখা যায়, কোরআন ছুঁয়ে, মাথা ছুঁয়ে, মাজার বা পীরের নামেও শপথ করে। ইসলামি বিধানমতে, তা শিরক ও সবচেয়ে বড় গুনাহ। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করে, সে অবশ্যই কুফরি বা শিরক করল।’ (তিরমিজি: ১৫৩৫)
স্মরণ রাখতে হবে, অহেতুক শপথ করা ইসলাম সমর্থন করে না। শপথ ভঙ্গ করাও ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মিথ্যা শপথ করা কবিরা গুনাহ। আবার মিথ্যা শপথ করে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা জঘন্য কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত সকল কবিরা গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

