ইসলামি বিধানমতে, সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুদের জন্য রোজা রাখা ফরজ বা জরুরি নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোক থেকে কলম (বিধান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, ১. নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয় ২. পাগল, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং ৩.অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না বালেগ হয়। (আবু দাউদ: ৪৩৯৮)
কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা বা খুব বেশি কষ্ট না হলে ছোটবেলা থেকেই রোজার অনুশীলন করানো মোস্তাহাব। ফিকাহবিদরা বলেন, ‘রোজার হুকুমও নামাজের মতোই। স্বাস্থ্য সবল থাকলে ৭-৮ বছর বয়স থেকে ধীরে ধীরে রোজায় অভ্যস্থ করবে। এরপর ১০ বছর বয়সে উপনীত হলে যদি স্বাস্থ্যগতভাবে দুর্বল না হয়, প্রয়োজনে রোজার জন্য শাস্তিও দেওয়া যাবে।’ (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৪০৯)
বিজ্ঞাপন
সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের সন্তানদের রোজা রাখতে উৎসাহিত করতেন। রুবাইয়ি বিনতে মুআওয়িজ (রা.) বলেন, ‘আমরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের সন্তানদেরও রোজা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত।’ (সহিহ বুখারি: ১৯৬০)
আরও পড়ুন: ঋতুবর্তীসহ ৬ শ্রেণির মানুষের রোজা না রাখার অনুমতি
তবে শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন তারা কোনোরকম চাপ অনুভব না করে। যেমন- শুরুর দিকে দিনের নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে এবং ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাদের মনে রোজার ফজিলত ও জান্নাতে রোজাদারের ঈর্ষণীয় মর্যাদার কথা গেঁথে দিতে হবে। রোজা না রাখলেও বড়দের সঙ্গে সেহেরি ও ইফতারের সময় গুরুত্বসহকারে তাদের শরিক রাখতে হবে।
পূর্ণাঙ্গ রোজা রাখলে তার দৃঢ়তা ও সাহসিকতার প্রশংসা করতে হবে। যাতে সামনের সময়গুলোতে ইবাদতের নতুন উদ্যম তৈরি হয়। রোজার কথা ভুলিয়ে রাখতে তাকে অক্লান্তিকর খেলাধুলায় মাতিয়ে রাখাও হাদিসের শিক্ষা। সন্তানের কষ্ট হবে, ওজন কমে যাবে, পড়াশোনার ক্ষতি হবে ইত্যাদি সাধারণ অজুহাতে রোজা রাখতে সক্ষম শিশুদের রোজা রাখতে বাধা দেওয়া বা নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: রমজানে ১৩ আমলের ফজিলত সবচেয়ে বেশি
অনেকে ছোট শিশুর সওয়াব-গুনাহের তোয়াক্কা করে না। এমনটা উচিত নয়। সন্তান গুনাহের কাজ করলে তাদেরকে বাধা দেওয়া জরুরি। অন্যথায় বড়রা এর ভাগি হবে। যেমনিভাবে শিশুরা নেক কাজ করলে এর সওয়াব পেয়ে থাকেন সন্তানের অভিভাবকরা।তাই শিশুদের দ্বীনি আমলের ব্যাপারে যেমন উৎসাহিত করতে হবে তেমনি গুনাহের কাজ থেকেও বিরত রাখতে হবে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমিন।