দোয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনু মাজাহ: ৩৮২৯) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি: ২১৩৯)
যথাযথভাবে দোয়া করলে তা কখনও বৃথা যায় না। তিন পদ্ধতিতে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। ১. সে যে দোয়া করেছে, হুবহু তা কবুল করে দুনিয়াতে দেওয়া হয়। ২. তার দোয়ার প্রতিদান পরকালের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ৩. দোয়ার মাধ্যমে তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)
বিজ্ঞাপন
আসলে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করতে পছন্দ করেন। সেটা পবিত্র কোরআনেই ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন: ৬০)
আরও পড়ুন: মা-বাবার জন্য আল্লাহর শেখানো ৩ দোয়া
আল্লাহর গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়া করলে তা কবুলের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং তা দোয়ার আদবও বটে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাকে সেসব নামেই ডাকো।’ (সুরা আরাফ: ১৮০)
এক্ষেত্রে ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নান’ ‘ইয়া বাদিয়াস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ’ ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়ুম’ ইত্যাদি শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশকারী নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহকে ডেকে ডেকে দোয়া করা বিনয়ের প্রকাশ। এছাড়াও বলতে পারেন- ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ’। মূলত এসব গুণবাচক শব্দগুলো দোয়ার ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। নবীজি এসব শব্দগুচ্ছকে ইসমে আজম বলেও অভিহিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি নামাজ আদায় করে এভাবে দোয়া করলেন- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالإِكْرَامِ يَا حَىُّ يَا قَيُّومُ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা বি আন্না লাকাল হামদ, লা ইলাহা ইল্লা আন্তাল মান্নানু বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সকল প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।’ তখন নবী (স.) বলেন, এই ব্যক্তি ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৫, অধ্যায়: ২/সালাত)
আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব
অন্য হাদিসে এসেছে, বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) দুইজন লোককে এই দোয়া বলতে শুনেছেন- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা, আন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’ অর্থ: ‘ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এবং আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, তুমিই আল্লাহ এবং তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। তুমি একক এবং অমুখাপেক্ষী যার কোনো সন্তান নাই এবং যিনি কারও সন্তান নন, যার সমকক্ষ কেউই নাই।’
তখন রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ইসমে আজমের মাধ্যমে চেয়েছ, যার মাধ্যমে চাইলে আল্লাহ দান করেন এবং দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন।’ (আবু দাউদ: ১৪৯৩)
উল্লেখ্য, আল্লাহর গুণবাচক নামের জিকির ছাড়াও দোয়ার আরো কিছু আদব রয়েছে। যেমন- দোয়ার আগে দরুদ পাঠ করা (আবু দাউদ: ১৪৮১; তিরমিজি: ৩৪৭৬), দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা (তিরমিজি: ৩৩৮৭), আশা নিয়ে দোয়া করা (মুসলিম: ৬৯৮৮), অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা (সুরা আরাফ: ৫৫), নিবিষ্ট মনে দোয়া করা (তিরমিজি: ৩৪৭৯), হারাম থেকে বেঁচে থাকা (তিরমিজি: ২৯৮৯), দুনিয়াতে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ—এই দায়িত্ব পালন করা। (তিরমিজি: ২১৬৯; সহিহুল জামে: ৭০৭০), আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করা (তিরমিজি: ৩৬০৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তাআলার কাছে যথাযথভাবে আদবের সঙ্গে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।